যাকাতের নেছাব নিয়ে কিছু কথা

যাকাতের নেছাব নিয়ে কিছু কথা
যাকাতের নেছাব নিয়ে ইসলামী স্কলারদের মত পার্থক্য সুস্পষ্ট। সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সমমূল্যমানের নগদ অর্থ, স্বর্ণ-রৌপ্য ও ব্যবসায়ী পণ্য কারো মালিকানায় এক বছর থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ। এখন এই সমমূল্য রৌপ্যের ভিত্তিতে না স্বর্ণের ভিত্তিতে এটা নিয়েই মতপার্থক্য। বর্তমানে স্বর্ণ ও রৌপ্যের মূল্যে বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের অনেক আলেম-উলামা দরিদ্রদের সুবিধার্থে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের সমপরিমাণ অর্থ (৫৫,৫০০/-) থাকলেই তার উপর যাকাত ফরজ বলে থাকেন। পক্ষান্তরে স্বর্ণের ভিত্তিতে যাকাতের নেছাব হতে হলে আনুমানিক পৌনে তিন লক্ষ টাকা প্রয়োজন হবে।
আমার বিবেচনায় স্বর্ণের ভিত্তিতে অর্থাৎ পৌনে তিন লক্ষ টাকা কারো মালিকানায় এক বছর থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। পক্ষে যুক্তিসমূহ:
১. বর্তমানে রৌপ্যের ব্যবহার নেই বললেই চলে অথচ স্বর্ণ বহুল ব্যবহৃত ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃত।
২. আল্লাহর রসূল (সা.) সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন
তোলা রৌপ্যের কথা বলেছেন। এটা শরীয়তপ্রণেতার দেয়া একটা সুযোগ। বিকল্পের যে কোন একটা সুবিধা গ্রহণের অধিকার আল্লাহর বান্দাহদের রয়েছে-চাই সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক। রসূল (সা.) নিজেও দু’টি বিকল্পের যেটা সহজ সেটা গ্রহণ করতেন। আল্লাহ তাঁর দ্বীনে কাঠিণ্য রাখেননি। তোমাদের কাজকে সহজ করে দিতে চান-কোনরূপ কঠোরতা আরোপ আল্লাহর ইচ্ছা নয়।
৩. ‘তোমাদের ধনীদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করো ও দরিদ্রদের মধ্যে বন্টন কর’। মাত্র ৫৫,০০০/- টাকা সম্পদের অধিকারীকে ধনীর সংজ্ঞায় আনা যায় না। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের তো ৫৫ হাজার টাকা এক মাসের খরচ। পৌনে তিন লক্ষ টাকা পরিমাণ সম্পদের মালিকানা হলে মোটামুটি কাউকে ধনী বলা যায়।
৪. বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ইসলামী চিন্তাবিদ ও ফকীহ ড. ইউসুফ আল কারযাভী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ইসলামের যাকাত বিধান বইতে অনেক Reference ও যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের ভিত্তিতেই যাকাতের নেছাব নির্ধারিত হওয়া উচিৎ।
আমার নিজের একটি সহজ-সরল অভিব্যক্তি হলো যে, শরীয়তে মাসালায় যখন কোন মত-পার্থক্য দৃষ্টিগোচর হলে তখন যে কোন একটা মত গ্রহণ করায় কোন সমস্যা নেই।

Comments