
পৃথিবী
থেকে চাঁদের অনেক রকমের দৃশ্যই দেখা যায়। একটা সময় ছিল যখন চাঁদের শরীরের
দাগগুলোকে নিয়ে বিভিন্ন মিথ চালু ছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার ফলে জানা
যায়, ওই দাগগুলো আসলে চাঁদের গায়ে থাকা বিশাল সব গর্ত। তেমনি চাঁদ থেকেও
যদি পৃথিবীর দিকে তাকানো যায় তাহলে এরকম কিছু গর্ত দেখা যায় কালো পর্দার
আদলে। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই এই গর্তগুলো নিয়ে কাজ করছেন। এরমধ্যে কিছু
গর্ত মানবসৃষ্ট, আবার কিছু গর্ত প্রকৃতিসৃষ্ট। প্রকৃতসৃষ্ট গর্তগুলোর
ব্যাপারে রহস্য সবচেয়ে বেশি এবং বিজ্ঞানীরা সেগুলো নিয়ে এখনও কাজ করে
যাচ্ছেন। আমাদের আজকের আয়োজনে এমনই দশটি গর্ত নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো
দেখতে সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর।
ডিনের ব্লু হোল

বামাহার
উপকূলবর্তী দ্বীপের কাছে এই গর্তটি অবস্থিত। ধারণা করা হয় গর্তটি প্রায়
সাড়ে ছয়শ ফুট গভীর। বাহামার প্রাচীন মিথে উল্লেখ আছে যে, এই বিশাল গর্তটি
খোদ শয়তান তৈরি করেছিল এবং মানুষদের শাস্তি দেয়ার জন্য এই গর্তটি ব্যবহার
করা হতো। যদিও বর্তমান সময়ে বিশ্বের নামকরা ডাইভারদের জন্য এই গর্তটি
স্বর্গ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। প্রতিবছর বিভিন্ন স্থান থেকে পেশাদার ডাইভাররা
এখানে ডাইভ দেয়ার জন্য আসেন।
কেনেকট কপার মাইন

বিংহ্যাম
ক্যানিয়ন মাইন নামেও পরিচিত এই গর্তটি। ১৯৬৬ সালে ন্যাশনাল হিস্টরিক
ল্যান্ডমার্কের অনুসারে এর নাম রাখা হয়েছিল। এর প্রস্থ প্রায় আড়াই মাইল।
উতাহ’র সল্প লেক সিটি পার্শ্ববর্তী অকিউরাহ পর্বতমালার পাশে এই বিশাল
গর্তটির অবস্থান। স্থানিক সূত্রে বর্তমানে গর্তটির মালিক যুক্তরাজ্যের
বিখ্যাত খনি কোম্পানি রিও টিনটো গ্রুপ।
চাঁদ বাওরি

এশিয়ার
বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের রাজস্থানে অবস্থিত হারসাত মাতা মন্দিদের
বিপরীতেই এই গর্তটি। এই গর্তটি অন্যান্য গর্ত থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। গর্তটির
শরীর জুরে রয়েছে অসংখ্য সিড়ি। তলদেশ থেকে আনুমানিক ১০০ ফুট উচু করে তৈরি
করা হয়েছিল এই গর্ত। খ্রিষ্টপূর্ব আটশ শতকে এই গর্তটি তৈরি করা হয়েছিল বলে
জানা যায়। হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘দ্য ফল’ এবং ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’
দুইটির শ্যুটিংও এখানেই হয়েছিল।
কিম্বালিং মাইন

গোটাবিশ্বে
এই গর্তটি ‘বিগ হোল’ নামেই পরিচিত। কিম্বার্লির এই খনি থেকে ছয় হাজার
পাউন্ডেরও বেশি হীরে উত্তোলন করা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই বিশাল
গর্তটি পুরোটিই অগুনতি শ্রমিকের রক্ত-ঘাম আর কায়িক শ্রমে নির্মিত।
ডোর টু হেল/নরকের দরজা

নামেই
স্থানের পরিচয়। তুর্কেমেনিস্তানের এই গর্তটি দেরউইজি নামে পরিচিত। পুরো
গর্তটি ৬৯ মিটার চওড়া এবং ৩০ মিটার গভীর। গত ৪০ বছর ধরে এই গর্তটি ক্রমশ
পুড়ছে। গত বছর কানাডার অভিযাত্রী জর্জ কুরুনিস এই গর্তটির ভেতরে প্রবেশ
করার চেষ্টা চালান। তার উদ্দেশ্যে ছিল, ওই গর্তের ভেতর কোনো প্রাণের
অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা নিশ্চিত করা।
কোলা সুপারডিপ বোরহোল

তৎকালীন
সোভিয়েত ইউনিয়ন তার গোপন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানোর জন্য পেকেনস্কি জেলায়
এই গর্তটি খুড়েছিল। প্রায় ৪০ হাজার ২৩০ ফুট গভীর এই গর্তে ঠিক কী পরীক্ষা
করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা তা আজও জানা যায়নি। তবে বেশ
কিছু বিতর্কিত সূত্র থেকে জানা যায়, পৃথিবীর ভরকেন্দ্র সম্পর্কিত কোনো গোপন
পরীক্ষা চালানো হয়েছিল এখানে।
গ্রেট ব্লু হোল

জ্যাকুয়েস
কস্তৌ নামের এক ভদ্রলোক এই কৃত্তিম গর্তটি তৈরি করেছিলেন। যদিও বর্তমানে
ইউনেস্কো এই গর্তটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিশ্বের শীর্ষ দশটি স্কুবা ডাইভিং স্পটের মধ্যে এটি অন্যতম। গর্তটি প্রায়
এক হাজার ফুট চওড়া এবং ৪০০ ফুট গভীর।
সমিল সিঙ্ক

উত্তর
বাহামার আবাকো দ্বীপে এই গভীর নীল গর্তের অবস্থান। এই গর্তেই আড়াই হাজার
বছরের পুরনো কচ্ছপের ফসিল পাওয়া গিয়েছিল। গর্তটি ৫৫ ফুট চওড়া এবং ১১০ ফুট
গভীর। স্থানীয় পর্যায়ে এই গর্তটি নিয়ে অনেক গল্প চালু আছে।
সেরভেনো জেজেরো

সেরভেনো
জেজেরো হলো বিশ্বের ভয়ংকর গর্তগুলোর মধ্যে তৃতীয়। ক্রোয়েশিয়ার মোৎস্কি
নামক অঞ্চলে এই গর্তটি দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক এই গর্তটি
দেখতে ক্রোয়েশিয়া গমন করেন।
ডেভিলস সিঙ্কহোল

টেক্সাসের
এই ডেভিলস সিঙ্কহোল হলো কয়েক মিলিয়ন মেক্সিকান বাদুরের আবাসস্থল। সাড়ে
তিনশ ফুট গভীর এই গর্তটি থেকে যখন ঝাকে ঝাকে বাদুর উড়তে শুরু করে তখন
সত্যিই সেটা একটা ভয়ংকর দৃশ্য।
Comments
Post a Comment