লাইলাতুল মোবারাকা তথা বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদরঃ
حم وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
হা-মীম। সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ। নিশ্চয় আমি এই কুরআন নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় ফায়সালা দেয়া হয়ে থাকে। আদ-দুখান, ৪৪/১-৪
কুরআন মাজীদের এ আয়াতের তাফসীর/ব্যাখ্যা সূরা আল-কদর দ্বারা করা হয়। আল্লাহ বলেন-
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ تَنَزَّلُ الْمَلائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ سَلامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
নিশ্চয় আমি এই কুরআন নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আর আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কি? লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য মালাইকা (ফেরেশতাগণ) ও রূহ অবতীর্ণ হয়
তাদের পালনকর্তার নির্দেশে। এই শান্তি ও নিরাপত্তা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আল-কাদর, ৯৭/১-৫
তাদের পালনকর্তার নির্দেশে। এই শান্তি ও নিরাপত্তা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। আল-কাদর, ৯৭/১-৫
অতএব বরকতময় রাত হল লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল বারায়াত (শবে বরাত) নয়। সূরা দুখানের প্রথম চার আয়াতের ব্যাখ্যা হল এই সূরা আল-কদর। সূরা আদ-দুখানের লাইলাতুল মুবারাকার অর্থ যদি শবে বরাত হয় তাহলে এ আয়াতের অর্থ দাড়ায় আল কুরআন শাবান মাসের শবে-বরাতে নাযিল হয়েছে অথচ আল-কুরআন নাযিল হয়েছে রামাযান মাসের লাইলাতুল কদরে। আল্লাহ বলেন-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآَنُ. شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ
রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য সঠিক পথ নির্দেশনা ও সঠিক পথের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। আল-বাকারাহ, ২/১৮৫
শবে-বরাত সম্পর্কে যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের অভিমতঃ
সুরা আদ-দুখান এর এই আয়াতগুলো সম্পর্কে, তাফসীরে ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেছেন,
-'নিশ্চয়ই আমি এই সুষ্পষ্ট কিতাব নাযিল করেছি বরকতময় রাতে আর তা হচ্ছে লাইলাতুল কদর। এই রেওয়াতটি বর্নিত হয়েছে ইবনে আব্বাস (রা:) হতে'।
অধিকাংশ মুফাস্সেরগণ এই বর্ণনাই করেছেন যে লাইলাতুল মোবারকই হচ্ছে লাইলাতুল কদরের রাত।
তবে ইকরামাসহ কয়েকজন বলেন, ‘ররকতের রাত হচ্ছে শাবানের মধ্য রাত। আর এই মধ্য শাবানের রাত হচ্ছে লাইলাতুল রহমান, লাইলাতুল মোবারক, লাইলাতুল চেক, লাইলাতুল বারাহ’! তাফসীরে রুহুল মানিতে এই নামগুলো পাওয়া যায়।
ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) ইকরামার এই মন্তব্যের ব্যাপারে বলেন, -‘সে ব্যক্তি বলবে যে লাইলাতুল মোবারকা হচ্ছে বরকতের রাত মানে শবে বরাতের রাত, সেই ব্যক্তি সত্য থেকে, হক্ব থেকে অনেক দুরে চলে গেলো’।
শবে বরাত সর্ম্পকে ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, -‘ওলামাদের ইখতেলাফ আছে, শাবানের ১৫ তারেখে কোন ফজিলত আছে কিনা! এই সম্পর্কে কিছু হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে।
সালাফদের কিছু লোকেরা একা একা নামাজ পড়তেন আর আম ভাবে রোজা রাখতেন। অধিকাংশ সালাফগণ, বিশেষ করে মদিনারবাসীরা ও অন্যান্য শহরের লোকেরা এই মধ্য শাবানেরর ফজিলত অস্বীকার করেছেন, তারা বলছেন এই রাতের কোন ফজিলত নেই। আর এই মর্মে যেই হাদিসগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেইগুলোর কোনটি সহীহ নয় বরং জঈফ বা জাল হাদীস। শাবানের ১৫ তারিখের রাত অন্যান্য রাতের মাঝে কোন পার্থক্য নেই’।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া আরও বলেন, -‘এই রাতের ফাজিলত আছে তার জন্য যে ব্যক্তি মুশরীক নয় ও যে ব্যক্তি বিদ্বেষী নয়। এই এই রাতে আল্লাহ মাফ করেন’।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া আরও বলেন, -‘তবে শুধু ১৫ তারিখে দিনে রোজা রাখা এর কোন ভিত্তি নেই। বরং এটি হচ্ছে অপছন্দনীয়। এটাকে উৎসবে পরিনত করা, এতে খাদ্য তৈরী করা (হালুয়া, রটি তৈরী করা) এবং সাজ-সোজ্জা করা এইগুলো হচ্ছে বিদাআতী কাজ, এগুলোর কোন ভিত্তি নেই।
শবে বরাতের জাল-জঈফ হাদিসসমূহঃ
►১. দূর্বল হাদীস >>>> ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ আমাদের কাছে আহমাদ ইবনে মুনী’ হাদীস বর্ণনা করেছেন যে তিনি ইয়াযীদ ইবনে হারূন থেকে, তিনি হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ থেকে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাসির থেকে, তিনি উরওয়াহ থেকে, তিনি উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন: আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বিছানায় পেলাম না তাই আমি তাকে খুঁজতে বের হলাম, ‘বাকী’ নামক কবরস্থানে তাকে পেলাম। তিনি ﷺ বললেনঃ তুমি কি আশংকা করেছো যে আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করবেন? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি মনে করেছি আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর কালব গোত্রের পালিত বকরীর পশমের পরিমানের চেয়েও অধিক পরিমান লোকদের ক্ষমা করেন।
ইমাম তিরমিযী বলেনঃ আয়িশা (রাঃ) এর এই হাদীস আমি হাজ্জাজের বর্ণিত সনদ (সূত্র) ছাড়া অন্য কোনভাবে চিনি না। আমি মুহাম্মাদকে (ইমাম বুখারী) বলতে শুনেছি যে, তিনি হাদীসটিকে দুর্বল বলতেন। তিরমিযী (রহঃ) বলেনঃ ইয়াহ্ইয়া ইবনে কাসীর উরওয়াহ থেকে হাদীস শুনেননি। এবং মুহাম্মদ (ইমাম বুখারী) বলেছেনঃ হাজ্জাজ ইয়াহ্ইয়াহ ইবনে কাসীর থেকে শুনেননি। এ হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম বুখারী ও ইমাম তিরমিযীর মন্তব্যে প্রমাণিত হয় যে, হাদীসটি দুটো দিক থেকে মুনকাতি অর্থাৎ উহার সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন। অপর দিকে এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হাজ্জাজ ইবনে আরতাহ মুহাদ্দিসীনদের নিকট দুর্বল বলে পরিচিত।
সুতরাং যারা শবে বরাতের বেশী বেশী ফাযীলাত বয়ান করতে অভ্যস্ত তারা তিরমিযী বর্ণিত এ হাদীসটি খুব গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করেন অথচ যারা হাদীসটির অবস্থা সম্পর্কে ভাল জানেন তাদের এ মন্তব্যটুকু গ্রহণ করতে চান না। এ হাদীসটি ‘আমলের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য হওয়ার জন্য ইমাম তিরমিযীর এ মন্তব্যটুকু কি যথেষ্ট নয়? যদি তর্কের খাতিরে এ হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে ধরে নেয়া হয় তাহলে কি প্রমাণিত হয়? আমরা যারা ঢাকঢোল পিটিয়ে মাসজিদে একত্র হয়ে যেভাবে শবে বরাত উদযাপন করি তাদের ‘আমলের সাথে এ হাদীসটির মিল কোথায়?
বরং এ হাদীসে দেখা গেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ﷺ বিছানা ছেড়ে চলে গেলেন, আর পাশে শায়িত আয়িশা (রাঃ) কে ডাকলেন না। ডাকলেন না অন্য কাউকে। তাকে জাগালেন না বা সালাত আদায় করতে বললেন না। অথচ আমরা দেখতে পাই যে, রামাযানের শেষ দশকে আল্লাহর রাসূল ﷺ নিজে রাত জেগে ইবাদাত-বন্দেগী করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। বেশী পরিমাণে ইবাদাত-বন্দেগী করতে বলতেন। যদি ১৫ শাবানের রাতে কোন ইবাদাত করার ফাযীলাত থাকত তাহলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ﷺ কেন আয়িশাকে (রাঃ) বললেন না? কেন রামাযানের শেষ দশকের মত সকলকে জাগিয়ে দিলেন না, তিনি তো নেক কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলের চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি তো কোন অলসতা বা কৃপণতা করেননি।
►২ নং দূর্বল হাদীস >>>> আলী ইবনে আবী তালেব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন তোমরা রাত জেগে সালাত আদায় করবে আর দিবসে সিয়াম পালন করবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সূর্যাস্তের পর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করে বলেনঃ আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিয্ক প্রার্থনাকারী আমি রিয্ক দান করব। আছে কি কোন বিপদে নিপতিত ব্যক্তি আমি তাকে সুস্থ্যতা দান করব। এভাবে ফজর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। [ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী, মিশকাত-১৩০৮, সিলসিলা জইফা-২১৩২]
✔প্রথমতঃ >>>> এ হাদীসটি দুর্বল। কেননা এ হাদীসের সনদে (সূত্রে) ইবনে আবি সাবুরাহ নামে এক ব্যক্তি আছেন, যিনি অধিকাংশ হাদীস বিশারদের নিকট হাদীস জালকারী হিসাবে পরিচিত। এ যুগের বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল-বানী (রহঃ) বলেছেন, হাদীসটি সনদের দিক দিয়ে একেবারেই দুর্বল।
✔দ্বিতীয়তঃ >>>> অপর একটি সহীহ হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য নয়। সে সহীহ হাদীসটি হাদীসে নুযুল নামে পরিচিত, যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হল: আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: আমাদের রব আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন ও বলতে থাকেনঃ কে আছ আমার কাছে দু‘আ করবে আমি কবুল করব। কে আছ আমার কাছে চাইবে আমি দান করব। কে আছ আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারী ও মুসলিম)
আর উল্লিখিত হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলা মধ্য শাবানের রাতে নিকটতম আকাশে আসেন ও বান্দাদের দু‘আ কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। কিন্তু বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত এই সহীহ হাদীসের বক্তব্য হল আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতের শেষের দিকে নিকটতম আকাশে অবতরণ করে দু‘আ কবুলের ঘোষণা দিতে থাকেন। আর এ হাদীসটি সর্বমোট ৩০ জন সাহাবী বর্ণনা করেছেন এবং বুখারী এবং মুসলিম ও সুনানের প্রায় সকল কিতাবে এসেছে। তাই হাদীসটি প্রসিদ্ধ। অতএব এই মশহুর হাদীসের বিরোধী হওয়ার কারণে এই হাদীসটি পরিত্যাজ্য হবে।
► ৩ নং দূর্বল হাদীস >>>> উসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ ﷺ বলেছেন: যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেয়ঃ আছে কি কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কেহ কিছু চাইবার আমি তাকে তা দিয়ে দিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ﷺ মুশরিক ও ব্যভিচারী বাদে সকল প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করা হয়। (বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আল-বানী (রহঃ) হাদীসটিকে তার সংকলন ‘যয়ীফ আল-জামে’ নামক কিতাবের ৬৫২ নং ক্রমিকে দুর্বল প্রমাণ করেছেন। শবে বরাত সম্পর্কে এ ছাড়া বর্ণিত অন্যান্য সকল হাদীস সম্পর্কে ইবনে রজব হাম্বলী (রহঃ) বলেনঃ এ মর্মে বর্ণিত অন্য সকল হাদীসই দুর্বল।
►►শাবানের মধ্য রজনীর সম্পর্কিত হাদীসসমূহ পর্যালোচনার সারকথাঃ
এ সকল হাদীসের কোথাও এ কথা নেই যে, আল্লাহর রাসূল ﷺ ও সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে গোসল করেছেন, মাসজিদে উপস্থিত হয়ে নফল সালাত আদায় করেছেন, যিকির-আযকার করেছেন, কুরআন তিলাওয়াত করেছেন, সারারাত জাগ্রত থেকেছেন, ওয়াজ নাসীহাত করেছেন কিংবা অন্যদের এ রাতে ইবাদাত বন্দেগীতে উৎসাহিত করেছেন অথবা শেষ রাতে জামাতের সাথে দু’আ-মুনাজাত করেছেন।
→ এ হাদীসসমূহের কোথাও এ কথা নেই যে, রাসূল ﷺ বা সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এ রাতের সাহরী খেয়ে পরের দিন সিয়াম (রোযা) পালন করেছেন।
→ আলোচিত হাদীসসমূহে কোথাও এ কথা নেই যে, রাসূল ﷺ বা সাহাবায়ে কিরাম এ রাতে হালুয়া-রুটি বা ভাল খানা তৈরী করে বিলিয়েছেন, বাড়ীতে বাড়ীতে যেয়ে মীলাদ পড়েছেন।
→ এ সকল হাদীসের কোথাও নেই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ﷺ বা সাহাবায়ে' কিরাম (রাঃ) এ রাতে দলে দলে কবরস্থানে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছেন কিংবা কবরে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন।
এমনকি রাসূল ﷺ এর যুগ বাদ দিলে খুলাফায়ে রাশেদীনের ইতিহাসেও কি এর কোন একটা আমল পাওয়া যাবে?
যদি না যায় তাহলে শবে বরাত সম্পর্কিত এ সকল ‘আমল ও আকীদা কি বিদ’আত নয়? এ বিদ’আত সম্পর্কে উম্মাতে মুহাম্মাদীকে সতর্ক করার দায়িত্ব কারা পালন করবেন?
এ দায়িত্ব পালন করতে হবে আলেম-উলামাদের, দ্বীন প্রচারক, মাসজিদের ইমাম ও খতীবদের। যে সকল বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের ইশারা নেই সে সকল আমল থেকে সাধারণ মুসলিম সমাজকে বিরত রাখার দায়িত্ব পালন করতে হবে নবী-রাসূলগণের উত্তরসূরীদের।
শবে বরাতের বিদ’আত সমূহঃ
বাংলাদেশে উৎযাপিত দিবস কেন্দ্রীক বিদ’আত সমূহের মধ্যে একটি অন্যতম বিদ’আত হলো শবে বরাত উৎযাপন! এ সময়ের সবচাইতে যে বিদ’আতটি বেশী করা হয় তা হলো -শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত বিভিন্ন তরিকার সালাত আদায় করা এবং পরের দিন সিয়াম পালন করা। রাসুল ﷺ থেকে এই রাতের নফল সালাত এবং রোজা রাখার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না।
এ দিবস উপলেক্ষে উৎযাপিত বিদ’আত সমূহ হলোঃ
✔ নির্দিষ্ট নিয়মে সালাতে আলফিয়া বা ১০০ রাক‘আত সালাত আদায় করা।
✔ একাকীব বা দল বেঁধে কবর জিরায়াত করা!
✔ সকিনা খতম করা
✔ মিলাদ মাহফিল করা!
✔ সম্মিলিতি জিকির করা!
✔ শেষ রাতে সম্মিলিত মোনাজাত করা!
মনে রাখা দরকার যে, কোন রাত ফজিলতপূর্ণ হলেই সেই রাতে ইবাদত করতে হবে; মনে করাই বিদ’আত যদি না তার প্রমানে দলিল (কোরআনের বানী বা বিশুদ্ধ হাদীস ) পাওয়া না যায়।
আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد
যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছে যা এতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। [সহীহুল বুখারী: ২৪৭৯, সহীহ মুসলিম: ১৭১৮]
জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
وَشَرُّ الْأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلُّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ، وَكُلُّ ضَلَالَةٍ فِي النَّارِ
আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হল দ্বীনের মধ্যে নতুন জিনিস সৃষ্টি করা আর সকল নতুন জিনিসই বিদআত আর সকল বিদআত-ই-গুমরাহী (পথভ্রষ্ট) আর সকল গুমরাহীর (পথভ্রষ্ট) পরিণাম জাহান্নাম। [নাসায়ী : ১৫৭৮]
আল্লাহ বলেন-
وَقَدِمْنَا إِلَى مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا
আর তারা (দুনিয়ায়) যে সকল আমল করেছিল আমি সেদিকে অগ্রসর হব অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণারূপে পরিণত করে দেব। আল-ফুরক্বান, ২৫/২৩
►► বিদআতী কোন আমল আল্লাহ কবুল করবেন না। তাই, আসুন মধ্য শাবানে শবে-বরাতের নামে এসকল বিদ’আতকে পরিত্যাগ করি।
শবে বরাত উপলক্ষে কতিপয় কুসংস্কারঃ
✔ সারা বছরের আয়ু, রূযী ও ভাগ্যের রেজিষ্ট্রার লিখিত হয়, মনে করা!
✔ সাধারন কবর, পীরের কবর, ঘরবাড়ি ইত্যাদি আলোক সজ্জা করা!
✔ হালুয়া-রুটি খাওয়া, কেক কাটা/খাওয়া!
✔ পটকা আতশবাজির মাধ্যমে হৈ-হুল্লোর করে রাত কাটিয়ে দেয়া!
✔ মিষ্টি দিয়ে জীব জন্তুর প্রতিকৃতি তৈরী করা!
✔ এই রাতে রূহগুলো সব আত্মীয়-স্বজনের সাথে মুলাক্বাতের জন্য পৃথিবীতে নেমে আসে, মনা করা!
✔ বিধবাদের মনে করা যে, তাদের স্বামীদের রূহ ঐ রাতে ঘরে ফেরে। এজন্য ঘরের মধ্যে আলো জেলে বিধবাগণ সারা রাত মৃত স্বামীর রূহের আগমনের আশায় বুক বেঁধে বসে থাকা!
✔ বাসগৃহ, মসজিদ, কবরস্থানসমূহ ধুপ-ধুনা, আগরবাতি, মোমবাতি ইত্যাদি দিয়ে আলোকিত করা!
►►আসুন মধ্য শাবানে শবে বরাতের নামে এসকল কুসংস্কারকে পরিত্যাগ করি।
সংগৃহীত এবং সংযোজিত