গুনাহের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে

গুনাহের শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে
০৮/০৫/২০১৫ বিজয়নগর বাইতুন নূর জামে মসজিদের খতিব মুফতী মুহাম্মদ জাকারিয়া জুমার খুতবায় বলেন-
আল্লাহ ও তাঁর রসূল সা.-এর আদেশ ও নিষেধ অমান্য করার নামই গুনাহ। গুনাহ করলে শাস্তিস্বরূপ দুনিয়াতে তার পেরেশানী সৃষ্টি হয়। প্রথমের দিকে অস্বস্তি দেখা দেয় কিন্তু সেই গুনাহ অব্যাহত রাখলে আস্তে আস্তে সে অস্বস্তি দূর হয়ে যায় এবং এক সময় সে অপরাধ জগতে ডুবে যায়। হারাম উপার্জনে অভ্যস্ত ব্যক্তি কখনই
তৃপ্তি পায় না। তার স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজনের চাহিদাও পাল্লা দিয়ে বেড়ে যায়। ফলে অশান্তি ও অতৃপ্তি সব সময় তাকে তাড়া করে। আর আখিরাতের শাস্তি তো রয়েছেই। রসূল সা. বলেন-বান্দাহ যখন গুনাহ করে তখন তার অন্তরে মরিচা ধরে। আর এ মরিচা দূর করার উপায় হলো খালিছ দিলে তাওবা করা অর্থাৎ অনুতপ্ত হয়ে গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং গুনাহের পুনরাবৃত্তি না করা। আমাদের সমাজে ক্বলবের মরিচা দূর করার জন্য নানা ধরনের জিকিরের প্রচলন রয়েছে। এতে মরিচা দূর না হয়ে অনেক সময় মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পীর সাহেবের অজ্ঞ মুরিদদের মধ্যে এটা লক্ষণীয়। এ জাতীয় জিকির রসূল সা. থেকে প্রমাণিত নয়। রসূল সা. আমাদেরকে সার্বক্ষণিক জিকির শিখিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষণ ও কর্মে আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহর নাফরমানি থেকে দূরে থাকার নামই হলো জিকির। এ জিকিরের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। সর্বক্ষণ ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকতে হয়। এ ছাড়া আল্লাহর বান্দাহ কখনো উচ্চারণ করবে সুবহান আল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ইন্না লিল্লাহ ইত্যাদি। নামায শেষে সুবহান আল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবর পাঠের কথা সহীহ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
ইসলামে দ্বীনদারী ও দুনিয়াদারী বলে কিছু নেই। একজন মুসলমানের সকল কর্মই ইবাদত যদি তা আল্লাহর নাফরমানিমুক্ত হয়। হালাল উপার্জন শ্রেষ্ঠতম ইবাদত এবং সকল ইবাদতের পূর্বশর্ত। ব্যবসা-বাণিজ্য-চাকুরি সবই ইবাদত যদি তাতে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা রক্ষিত হয়। আখিরাতের উদ্দেশ্য বিয়ে-সাদী, ঘর-সংসার না করে একান্তভাবে আল্লাহর ধ্যানে জীবন অতিবাহিত করা ইসলাম সমর্থিত নয়। রসূল সা. হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন ঠিকই, কিন্তু তা ছিল খুব স্বল্পাস্থায়ী ও আল্লাহরই নির্দেশক্রমে। ওহী প্রাপ্ত হওয়ার পর আল্লাহর নির্দেশে তিনি জমীনে বিচরণ করেছেন ও মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান জানিয়েছেন। তাঁর আহবান ছিল-‘হে মানুষ! তোমরা বলো আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তাহলেই তোমরা সফলকাম হবে।‘ কিন্তু তাঁর এ আহবান মানুষ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি বা অতীতেও নবী-রসূলদের এ আহবান কখনো গ্রহণ করা হয়নি। একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যা কার্যক্রম রসূল সা. তা থেকে নিজেকে আলাদা করেননি। ঘর-সংসার, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই করেছেন। তিনি তাঁর স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির প্রতি অত্যন্ত দায়িত্ববান ছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের আদর ও তাদের প্রয়োজন পূরণ সবই সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পাড়া-প্রতিবেশী ও অধীনস্থদের সাথে উত্তম আচরণকে অত্যন্ত নেকির কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি ঘুমও একজন মু’মিনের ইবাদত। রসূল সা. বলেছেন-যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করলো সে যেন সারা রাত নামাযেই কাটালো। একজন মু’মিনের সমগ্র জীবন : তার ঘর-সংসার, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনাসহ সমগ্র জীবনই ইবাদতে অতিবাহিত হতে পারে যদি সে সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করে।
প্রশ্নোত্তরে মহিলাদের কুরআনের তাফসির করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন কুরআনের তালিম, কুরআন-হাদিস পাঠ করে মানুষকে শোনানো অত্যন্ত ভালো কাজ সন্দেহ নেই বরং যে যতটুক জানে তা প্রচার করা ও মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা ফরজ কাজ। কিন্তু প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও যোগ্যতা, বিশেষ করে আরবী গ্রামার জানা না থাকলে নিজে থেকে তাফসির করা উচিৎ নয় এবং তাতে ভুল করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি আধুনিক শিক্ষিত জনৈক ভদ্রলোকের ওযু সম্পর্কীয় আয়াতের তাফসির করা প্রসঙ্গে বলেন যে, গ্রামার না জানায় তিনি পা না ধুয়ে মাছেহ করার কথা বলেছেন। আরবী গ্রামারের ন্যূনতম জ্ঞান থাকলে তিনি এ ভুল করতেন না। ফতোয়া দেয়ার ব্যাপারেও তিনি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন। বিজ্ঞ আলেম ও মুফতি ছাড়া কারো ফতোয়া দেয়া ঠিক নয়, সমাজে তাতে কেবল বিভ্রান্তিই বাড়ে। তালাকের ফতোয়া প্রসঙ্গে বলেন, এটা আরো জটিল এবং লিখিতভাবে ঘটনা বর্ণনা করে উভয়ের উপস্থিতিতে একজন মুফতিই পারেন তালাকের ফতোয়া দিতে।