প্রসংগঃ কেমন হবে সুন্নতী পোশাক????
============
*** সুন্নতী পোশাক!!!
সুন্নত বলতে আমরা কি বুঝি আল্লাহ্র নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে রাসূল (সাঃ) যে সমস্ত কাজের আদেশ বা নির্দেশ দিয়েছেন কিংবা নিষেধ করেছেন , ওহীর নির্দেশ অনুযায়ী নিজে আমল করেছেন এবং অন্যের কাজে সম্মতি দিয়েছেন ঐগুলোই হলো ইসলামের মধ্যে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত , যা সমস্ত মুমিন মুসলিমদের মানা উচিৎ। কিন্তু ওহীর নির্দেশ ব্যাতীত রাসুল (সাঃ)
নিজে মানুষ হিসেবে যা করেছেন এবং ঐ সমস্ত কাজ যা মানুষ হিসেবে যে কোন লোকই করে থাকে তা ইসলামী শরীয়তে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত নয় বরং মুবাহ অর্থাৎ ঐচ্ছিক , যে কেউ চাইলে করতে পারে আবার না করলেও কোন ধরনের সমস্যা নেই। সর্বসাধারণের বুঝার জন্য উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে বলি , যেমনঃ রাসূল (সাঃ) তার দুধমার দুধ পান করেছেন কিন্তু দুধমার দুধ পান করা সুন্নত বলা যাবে না ; তিনি মাছ খেতেন না কারণ মাছের গন্ধ তার পছন্দ হতো না তাই বলে মাছ
না খেলে সুন্নত পালন হবে এ কথা বলা যাবে না। আবার তিনি হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন কিন্তু হেরা গুহায় ধ্যান করাকে সুন্নত বলা যাবে না। তিনি জীবনে প্রথমবার একজন বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেছেন কিন্তু বিধবা মহিলাকে বিবাহ করা সুন্নত এ কথা বলা যাবে না। তিনি ২৫ বৎসর বয়সে বিবাহ করেছেন তাই বলে ২৫ বৎসরে বিবাহ করা সুন্নত এ কথা বলা যাবে না। তার বিবাহের সংখ্যা ১১ কিন্তু একের অধিক বিবাহ সুন্নত বা সুন্নত পালন করতে হলে ১১ টি বিবাহ করতে হবে এই ধরনের কথা বলা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং এই সমস্ত কাজ পালন করা কিংবা পালন করলে অবশ্যই সওয়াব পাওয়া যাবে এরূপ মনে করা ইসলামের শরিয়াহ সম্পর্কে মূর্খ ও অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে এটা বিদ’আত হিসেবেও গণ্য হবে।
সুন্নতী পোশাক এর বিশ্লেষণঃ
পোশাক পরিধান করা মানব সভ্যতার একটি অংশ। পৃথিবীর সকল সভ্য মানুষই পোশাক পরিধান করে থাকে। তবে দেশভেদে বিভিন্ন দেশের পোশাক বিভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের দেশীয় পোশাক লুঙ্গি যেমন মুসলিমরা পরিধান করে। তেমনি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ অমুসলিমরাও লুঙ্গি পরিধান করে। আরব দেশে যে পোশাক পুতুল বা মূর্তি পূজারী, নাসারা, ইহুদী, কাফির, মুশরিকরা পরিধান করত, সে দেশের দেশীয় প্রচলিত পোশাক হিসেবে আমাদের নবী (সাঃ)ও তা পরিধান করতেন। নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে নবী (সাঃ) যে পোশাক পড়তেন, নবুয়ত প্রাপ্তির পর ওহী প্রাপ্ত হয়ে আমাদের নবী (সাঃ) পুরাতন পোশাক ছেড়ে দিয়ে নতুন নিয়মের, নতুন ডিজাইনের কোন পোশাকের ব্যাপারে আদিষ্ট হয়ে তা পরিধান করতে শুরু করেননি বরং সেই পোশাক সহ পৃথিবীর সকল পোশাকের মধ্যে কিছু সীমারেখা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন যা এই রিসার্চটিতে পরবর্তীতে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ ও নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে ৪০ বৎসর ধরে যে পোশাক পরিধান করেছেন, নবুয়ত প্রাপ্তির পরও তিনি তা জীবনের বাকী ২৩ টি বৎসর পরিধান করে গেছেন। তিনি নিজের জন্য কিংবা তার সাহাবীর অথবা উম্মতের জন্য কোন নির্দিষ্ট ধরনের সুন্নতী পোশাক নির্ধারণ করে দেননি বরং কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সাঃ) একবার বলেছিলানঃ যে জাতি যে সভ্য পোশাক পরিধান করে সেটাই হলো সেই মুসলিমদের পোশাক। অত্যন্ত ন্যায় ও যুক্তিপূর্ণ কথা, কারণ মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহ্ তা’আলা সমগ্র মানব জাতির জন্য সর্বশেষ রাসূল করে পাঠিয়েছেন। যদি তিনি কোন পোশাককে নির্দিষ্ট করে যেতেন তাহলে তা কিছু মানুষ জাতির জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াত কারণ নির্দিষ্ট কোন দেশের পোশাক অন্য কোন দেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য না’ও হতে পারে। এদেশের মৌলভী বা হুজুরদের পরিধানকৃত পাঞ্জাবী বা তথাকথিত নামধারী সুন্নতী পোশাক যদি আসলেই রাসুল (সাঃ) এর সুন্নতী পোশাক হিসেবে ধরে নেয়া হয় তাহলে সাইবেরিয়ার মতো পৃথিবীর অন্যান্য শীতপ্রধান এলাকার মানুষদের জন্য এ পোশাক নিশ্চিত মৃত্যু ডেকে আনত।
আমাদের দেশের কিছু মৌলভীগন বহু ক্ষেত্রেই সহীহ হাদীসের বর্ণনা থাকা সত্তেও রাসুল (সাঃ) এর বহু আদেশ নিষেধ মানেন না। অথচ পোশাকের মধ্যে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত আবিষ্কার করলেন। লম্বা কলিদার সাদা কোর্তা পাঞ্জাবীকে তারা সুন্নতী পোশাক বলে দাবী করেন এবং সেটা পরিধান করে নিজেদেরকে সুন্নী বলে গর্ববোধ করেন। তাদের আচরণ দেখলে মনে হয় পৃথিবীতে একমাত্র তারাই যেন সুন্নত পালন করেন। আর যারা এই ধরনের পোশাক পরিধান না করে ইসলাম নিয়ে কথা বলে এমনকি কোরআন ও সহীহ হাদীসের কথা বলে তাদেরকে এইসব মৌলভীগন ওয়াহাবী, সুন্নতের বিরোধী, খ্রিষ্টান ইহুদি ও আমেরিকার দালাল, ইত্যাদি কটু ও অশ্লীল সম্বোধন দ্বারা মন্তব্য করে থাকেন এবং ফতোয়া দিয়ে থাকেন যে এই ধরনের মানুষের কথা শোনা যাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। স্বাধীনতা পূর্বকালে হিন্দু জমিদাররা পাঞ্জাবী পরিধান করত। বর্তমানেও ভারতের হিন্দু রাজনীতিবিদসহ অনেক অমুসলিম ভারতবর্ষের পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবী পরিধান করে থাকে।
১৪০০ বৎসর পূর্বে আরবের কোথাও পাঞ্জাবীর প্রচলন ছিল না কিংবা বর্তমানেও এর প্রচলন নেই। তাই এই ধরনের পোশাককে সুন্নতী পোশাক বলে চালিয়ে দিতে চাইলে তা রাসূল (সাঃ) এর নামে মিত্থা অপবাদ দেয়া হবে। আর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ যে আমার প্রতি স্বেচ্ছায় মিত্থারোপ করে সে যেন তার স্থান জাহান্নাম করে নেয়। আমার নিজের চোখে অনেক মৌলভীদের দেখেছি তারা বহু ক্ষেত্রে কোরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণনা থাকা সত্তেও রাসুল (সাঃ) এর বহু আদেশ নিষেধ মানেন না। রাসুল (সাঃ) ভিক্ষা করা পছন্দ করতেন না। কিন্তু ভিক্ষুকদের মতো আমাদের দেশের কিছু মৌলভীদের দেখা যায় তথাকথিত এ সুন্নতী পোশাক অর্থাৎ পায়জামা পাঞ্জাবীর সাথে টুপি পরিধান করে এই পোশাককে পুঁজি করে নানা শিরক ও বিদ’আতপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন এবং নিজেদের পকেট ভর্তি করছেন, যেমনঃ মিলাদ মাহফিল, কুলখানি, চল্লিশা, কোরআনখানী, বিভিন্ন ধরনের খতম, উরশ, ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে আমি নিজে অনেক মৌলভীদেরকে কোরআনের আয়াতসহ সহীহ হাদীসের নাম, খন্ড, হাদীস ও পৃষ্ঠা নম্বরসহ বরাত দিয়ে কোরআন হাদীসের কথা বলেছি। তখন প্রায় সবাই বাপ দাদা ও পীরদের দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেছেন। এই হলো আমাদের দেশের সুন্নী গর্ববোধ করা মৌলভীদের নমুনা। রাসুল (সাঃ) এর সময় আরবে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল খুব কম। মুসলিম, ইহুদী, খ্রিষ্টান, মূর্তিপুজারী, কাফির, মুশরিক, প্রভৃতি আরববাসী এখন যে পোশাক পরিধান করছে প্রায় ১৪০০ বৎসর পূর্বেও ঐ পোশাক পরিধান করত। তাহলে স্পষ্টতই এ ধরনের পোশাক আরবের সংখ্যাগরিষ্ঠের পোশাক এবং শুধু রাসুল (সাঃ) এর একার পোশাক ছিল না।
ভারত উপমহাদেশসহ বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন মুসলিম দেশ সুন্নতী পোশাক আবিষ্কার করেননি। ইউরোপ, আমেরিকা সহ পৃথিবীর মুসলিম দেশ যথা সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের মুসলিমরা তাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পোশাক পরিধান করে এবং কোন ধরনের সুন্নতী পোশাকের আবিষ্কার করেনি। সুন্নতী নামের পোশাক শুধু ভারত উপমহাদেশের মৌলভীগন আবিষ্কার করে ফেললেন। হিন্দুদের ভগবানের কাছে আরাধনা পৌছানোর জন্য তাদের বিভিন্ন গোত্রের পৃথক পৃথক ধর্মযাজক, গুরু, গোঁসাই, ঠাকুর ও পুরোহিত রয়েছে। কিন্তু ইবাদাত করে আল্লাহ্র কাছে পৌছানোর জন্য মুসলিমদের এরূপ কোন ঠাকুর, পুরোহিত বা মৌলভী, হুজুর প্রথার ব্যবস্থা ইসলামের শরিয়াহতে নেই। তাই তাদের মত নির্দিষ্ট কোন ডিজাইনের বা আকারের পোশাকও নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুদের ঠাকুর ও পুরোহিতদের মত এই স্থান দখল করে নিয়েছে আমাদের সমাজের কিছু পীর ও মৌলভীগন। তারা ইসলাম ধর্মের নামে তাদের ব্যবসায়ে হিন্দুদের রীতিনীতি ও কায়দায় একটি পৃথক পোশাকের প্রয়োজন উপলব্ধি করলেন এবং সেটা সুন্নাতী পোশাক বলে চালিয়ে দিলেন। তারা এই তথাকথিত সুন্নতী পোশাক দ্বারা তাদের শিরক ও বিদ’আত পূর্ণ অনুষ্ঠান প্রচলন করে দিলেন ধর্মের নামে তাদের ব্যবসার জন্য। ঐ সমস্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে থাকা নীতিবিবর্জিতভাবে আয় করার জন্যে লোকদের সহজভাবে জান্নাত পাওয়ার পথ দেখানোর মিত্থা প্রলোভন দেখাতে সক্ষম হলো, তেমনি অন্যদিকে তারা তাদের পেট পূজার ব্যাবস্থা করে পকেট ও পেটকে স্ফীত করার সুযোগ করে নিলো। অথচ মাদ্রাসা থেকে তারা যে পাঠ শিখে আসলো যে, ধর্মীয় আমলের জন্যে কোন টাঁকা পয়সা গ্রহন করা হারাম ; তা মাদ্রাসার গণ্ডি থেকে বের হয়েই ভুলে গেল। কি সুন্দর শিক্ষা, আর কি সুন্দর তার বাস্তবায়নের নমুনা। তাদের রোজগারকে নিশ্চিত করার জন্য এ নিয়মও বানানো হলো যে, ইসলামের নামে ঐ সমস্ত শিরক ও বিদ’আতী অনুষ্ঠানগুলো মাদ্রাসা পড়ুয়া মৌলভী কিংবা যত্রতত্র গজিয়ে উঠা পীরদের দ্বারা সমাধা করতে হবে, যেমনিভাবে হিন্দু রীতিনীতিতে ঠাকুর বা ব্রাহ্মণ ছাড়া পূজা করার অধিকার কোন সাধারণ হিন্দুর নেই। ঠাকুরদের মত তাদেরকেও টাঁকা কড়ির সাথে ভুরিভোজের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে যে এক ধরনের পোশাক তথাকথিত সুন্নতী পোশাক বলে প্রচলিত আছে তা যদি কেউ পরিধান না করে তাহলে তাকে সুন্নত বিরোধী, ফাসেক বলে বিবেচনা করা হয় এবং এমন লোক যদি তথ্যসূত্র ও সনদসহ ইসলাম প্রচার করে তাহলেও তার কথা শোনা জায়েয হবে না বলেও কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করে থাকেন।
সুন্নতী পোশাক বলতে সত্যিই কি সাদা লম্বা কলিদার জামা, লম্বা পাঞ্জাবী, লম্বা কোর্তা, ইত্যাদিকে বুঝায়??? যেগুলোকে সুন্নতী পোশাক বলা হয় সেটার দলীল কি???
*** পোশাক সম্পর্কিত ইসলামের শরিয়াহর দলীলসমূহ
পোশাক এর ব্যাপারে ইসলামের শরিয়াহতে যে কয়েকটি দলীল রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি হলোঃ
হে আদম সন্তান ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পোশাক সৃষ্টি করেছি যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে এবং যা হবে ভূষণ। আর তাকওয়ার পোশাক , সেটাই কল্যাণময়। এ হচ্ছে আল্লাহ্র আয়াতসমূহের অন্যতম ; যাতে তারা উপদেশ গ্রহন করে। ( সূরা আ’রাফ , আয়াত নং- ২৬)
হে আদম সন্তান ! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান কর ... কিন্তু আপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না। (সূরা আ’রাফ , আয়াত নং- ৩১)
পাঠক লক্ষ্য করুন উপরের আয়াতে আল্লাহ্, রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নতী পোশাক না বলে সুন্দর পোশাক এর কথা বললেন; কারণ আল্লাহ্ সুন্নতী পোশাক-এর নামে কোন নির্দিষ্ট পোশাককে নির্ধারণ করেননি। আর যদি সুন্নতী পোশাক বলে কিছু থাকতোই তাহলে আল্লাহ্ কেন সুন্নতী পোশাকের কথা না বলে সুন্দর পোশাকের কথা বললেন, অথচ আল্লাহ্ কোরআনে বলেনঃ আমি (আল্লাহ্) কোন কিছু এই কোরআনে লিপিবদ্ধ করতে বাদ রাখিনি (সূরা আন’আম , আয়াত নং- ৩৮)। হয়ত তারা এখন বলতে চাইবে যে এই সুন্দর পোশাক বলতে আল্লাহ্ রাসূল (সাঃ)-এর পোশাককে বুঝিয়েছেন; তার জবাবে বলব যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে এই সুন্দর পোশাক বলতে বুঝায় রাসুল (সাঃ)-এর পোশাক ; তাহলে ইউসুফ (আঃ) এর জামা (সূরা ইউসুফ , আয়াত নং- ১৮) এবং আয়েশা (রা) ও ফাতেমা (রা) সহ অন্যান্যরা যে পোশাক পড়েছেন সেটা কি সুন্দর পোশাক নয়, তারা তো রাসুল (সাঃ)-এর মতো পোশাক পড়েননি। তাহলে কি তারা সুন্নত পালন করেননি? তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, রাসুল (সাঃ) পোশাক ছাড়াও আরও সুন্দর পোশাক রয়েছে এবং আল্লাহ্ তা পড়ার অনুমতি দিয়েছেন, তা-ও নামাযের মধ্যে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ......যা ইচ্ছা পরিধান করো যতক্ষণ না তাতে অবচয় বা অহংকারের সংযোগ না ঘটে। (প্রমান দেখুন- সহীহ বোখারী শরীফ, ৯ম খণ্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লেবাস, পরিচ্ছেদ নং- ২৩৩০, পৃষ্ঠা নং- ৩১১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৬০৫, পৃষ্ঠা নং- ৩২১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
রাসূল (সাঃ)-এর ইয়ামনী দেশের চাদর অনেক পছন্দ ছিল এবং তিনি তা পরিধান করতেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮০, পৃষ্ঠা নং- ১৫৪, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার ; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খন্ড, হাদীস নং- ৩৫৫২ , ৩৫৫৩ , প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
রাসুল (সাঃ) রোমের দেশের পশমী চাদর ও জুব্বা পড়েছেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮৪, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৬ , ৩৫৬৩ , ৩৫৬৪ , প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন; বোখারী - রেওয়ায়াতে মিশকাত, ৮ম খণ্ড, হাদীস নং- ৪১১৬)
রাসুল (সাঃ) লুঙ্গি পড়তেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮২, পৃষ্ঠা নং- ১৫৫, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫১, ৩৫৬৫, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
রাসুল (সাঃ) এর কাছে পোশাক-এর মধ্যে কামিজ বা জামা ছিল সবচেয়ে প্রিয় এবং পরিধান ও করেছেন অনেক, এমনকি তাঁর ইন্তেকালের সময়ও জামা ও লুঙ্গি পরিধান করা ছিল। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৭৫, ৩৫৭৬; প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
রাসূল (সাঃ) বেশীর ভাগ সময়ই স্বল্প দৈর্ঘ্যের জামা বা কামিজ পড়তেন এবং এর সাথে পায়জামা পড়তেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৭, ৩৫৭৯; প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
মুসলিমদের পোশাকের উপর কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে যে নিয়মনীতি পাওয়া যায় তা হলোঃ
(০) পোশাকের সীমা নির্ধারণ এবং নিরীক্ষণঃ
শুধু এই নিয়মটাই পুরুষ ও মহিলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন। পুরুষের জন্য “সতর” হলো নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। এই সতর ফরজ অর্থাৎ ঢাকতেই হবে আর পায়ের গোড়ালির উপর পর্যন্ত কাপড় রাখা এবং মাথা ঢেকে রাখা সুন্নত। এছাড়া নারীর জন্য মুখমণ্ডল ও হাতের পাতা ছাড়া শরীরের সকল অংশই সতর। এই সতর ফরজ অর্থাৎ ঢাকতেই হবে। মুখমণ্ডল ও হাত ঢেকে রাখা উত্তম তবে না রাখতে পারলে কোন গুনাহ নেই। শুধু এই বিধানটা ছাড়া নিচের বাকি ৫টি বিধান নারী পুরুষের জন্য একই রকম। (সূরা আ’রাফ; সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৭১, ৫৩৭৪, ৫৩৭৫, ২৩৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন )
(১) পোশাকের আকার ও প্রশস্ততাঃ
পোশাক যেন ছোট, আঁটসাঁট এবং সংকীর্ণ না হয়। এমন পোশাক পড়া যাবে না যাতে শরীরের অবয়ব বা গঠন বুঝা যায় বা শরীরের সাথে যেন সেটে না থাকে। এ ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা পোশাকই উত্তম সেটা যেকোন সভ্য পোশাকই হতে পারে। ( সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৭৬, ৫৩৭৯, ৫৩৮১, ৫৩৮৩, ৫৩৮৪, ৫৩৮৫, ৫৩৮৮, ৫৩৯৬, ৫৩৯৭, ৫৪৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন )
(২) পোশাকের স্বচ্ছতাঃ
পোশাকের কাপড় এতটা স্বচ্ছ বা পাতলা হওয়া যাবে না যাতে করে শরীরের ভিতরটা দেখা যায় বা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ পোশাকের কাপড় এ রকম হতে হবে যাতে এক পাশ থেকে অপর পাশে না দেখা যায়। (প্রমান দেখুন – সূরা আহযাব, আয়াত নং- ৩৩; সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং-৫৪০৪, ৫৪০৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৯, ৩৫৬০, ৩৫৬১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৩) আকর্ষণীয়তাঃ
পোশাক ওই ধরনের আকর্ষণীয় বা চাকচিক্য হওয়া যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং নিজের মধ্যে অহংকারের সৃষ্টি করে। তবে নিজ স্বামী বা স্ত্রীর জন্য পড়া যাবে এতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু মাহরাম ব্যাক্তি ছাড়া অন্য কারো সামনে প্রদর্শিত করা যাবে না। উল্লেখ্যঃ মাহরাম ব্যাক্তি বলতে সেইসব ১৪ প্রকারের মানুষদেরকে বুঝায় যাদের সাথে বিবাহ হারাম, যেমনঃ আপন পিতা মাতা, ভাই, বোন, ইত্যাদি। (সূরা আহযাব, আয়াত নং- ৫৫; সূরা নূর, আয়াত নং- ৩১; সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস, হাদীস নং- ৫৩৭২, ৫৩৭৩, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৪) বিপরীত শ্রেণীর পোশাক না হওয়াঃ
নারী এমন পোশাক পড়বে না যা পুরুষরা পরে, আবার পুরুষেরাও এমন পোশাক পড়বে না যে পোশাক নারীরা পরে। অনুরূপ পুরুষ নারী সাজে এবং নারী পুরুষ সাজে সজ্জিত হবে না। (সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৪৬৬, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৫) ভিন্ন ধর্মের সাদৃশ্য পোশাক না হওয়াঃ
পোশাকে ভিন্ন ধর্মের কোন প্রতীকী চিহ্ন থাকা যাবে না, বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় লেবাস হিসেবে যা পরে তার অনুরূপ হওয়া যাবে না। যেমনঃ হিন্দুদের ওম চিহ্ন, খ্রিষ্টানদের ক্রস চিহ্ন, ইত্যাদি। এছাড়াও কোন মূর্তির বা প্রানীর ছবি থাকা যাবে না। এছাড়া অন্য জাতির দেশিয় সভ্য পোশাক পড়লে কোন সমস্যা নেই, যেমনঃ আরবরা বাংলাদশের দেশিয় পোশাক লুঙ্গি পড়তে পারবে, আবার বাঙ্গালীরা পাকিস্তানের দেশিয় পোশাক কাবলি পড়তে পারবে, এছাড়াও শীতকালীন দেশ সমূহের পোশাক কোট বা ব্লেজার পড়তে পারবে তবে এ ক্ষেত্রে উপরের বিধানগুলো মেনে চলতে হবে। (প্রমান দেখুন – সহীহ বোখারী শরীফ, ৯ম খণ্ড, পরিচ্ছেদ নং- ২৩৩০, হাদীস নং- ৫৫২৫, ৫৫২৬, ৫৫২৭, ৫৫২৮, ৫৫৩০, ৫৫৩৪, ৫৫৩৫, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন; সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৫০, ৫৩৫১, ৫৩৫২, ৫৩৫৩, ৫৩৫৪, ৫৩৫৫, ৫৩৫৬, ৫৩৫৭, ৫৩৫৮, ৫৩৫৯, ৫৩৬০, ৫৩৬১, ৫৩৬২, ৫৩৬৩, ৫৩৬৪, ৫৩৬৫, ৫৩৬৬, ৫৩৬৭, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৬০৫, পৃষ্ঠা নং- ৩২১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(***) অন্যান্য বিধানবলীঃ
এগুলি ছাড়াও নারী ও পুরুষের জন্য অন্যান্য যেসব বিধান আছে তা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হলো ; পুরুষঃ রেশমি কাপড় পড়া নিষিদ্ধ (সহীহ মুসলিম শরীফ , ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৪৯ , পৃষ্ঠাঃ ১৪৪ , প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার), তবে চর্ম রোগের কারনে পড়ার অনুমতি আছে (সহীহ মুসলিম শরীফ , ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৬৮ , ৫৩৬৯ , ৫২৭০ , ৫২৭১ , পৃষ্ঠাঃ ১৫১ , প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার)। স্বর্ণ পরিধান করা নিষিদ্ধ (সহীহ মুসলিম শরীফ , ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২২৭, ৫২২৮ , ৫২২৯ , প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার) ইত্যাদি। নারীঃ উল্কী বা ট্যাটু , ভ্রু প্লাগ , চুল মুণ্ডন ও পরচুলা বা আলগা চুল বা উইগ পরা হারাম এবং যারা পড়বে তাদের উপর আল্লাহ্ ও নবী (সাঃ) এর অভিশাপ [প্রমান দেখুনঃ- (১) সহীহ বোখারী শরীফ , ৯ম খণ্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লেবাস , পরিচ্ছেদ নং- ২৪১১ , ২৪১২ , ২৪১৩ , ২৪১৪ , ২৪১৫ , ২৪১৬ , হাদীস নং- ৫৫০৭ থেকে ৫৫২৪ (মোট ১৮ টি সহীহ হাদীস) , পৃষ্ঠা নং- ৩৭০ থেকে ৩৭৬ , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; (২) সহীহ মুসলিম শরীফ , ৫ম খন্ড , অধ্যায়ঃ পোশাক ও সাজসজ্জা , অনুচ্ছেদ নং- ৩৩ , হাদীস নং- ৫৪৫৮ থেকে ৫৪৭৪ (মোট ১৭ টি সহীহ হাদীস) , পৃষ্ঠা নং- ১৫০ থেকে ১৫৪ , প্রকাশনীঃ আ.হা.লাইব্রেরী / হাদীস নং- ৫৩৮২ থেকে ৫৩৯৬ (মোট ১৫ টি সহীহ হাদীস) , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ / হাদীস নং- ৫৪০২ থেকে ৫৪১৮ (মোট ১৭ টি সহীহ হাদীস) , প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ; (৩) তিরমিযী শরীফ , হাদীস নং- ২৭৮১ , ২৭৮২ , ২৭৮৩ , পৃষ্ঠা নং- ১৯০ , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; (৪) সুনানে আবু দাউদ শরীফ , হাদীস নং- ৪১২২ থেকে ৪১২৬ (মোট ৫ টি হাদীস) , পৃষ্ঠা নং- ৮৯৩ , প্রকাশনীঃ মিনা বুক হাউজ ; (৫) সুনানে নাসাঈ শরীফ , হাদীস নং- ৫০৪৮ , ৫০৯১ থেকে ৫১১১ (মোট ২২ টি হাদীস) , পৃষ্ঠা নং – ৫০২ থেকে ৫০৮ , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; এখানে সর্বমোট মাত্র ৬৫ টি হাদীস এর তথ্যসুত্র উল্লেখ করা হল, এছাড়াও এই সম্পর্কে আরো শত শত হাদীস রয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য হাদীস শাস্ত্র অধ্যায়ন করুন।]
মোট কথাঃ
### পোশাক এমন হতে হবে যা মানুষের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে।
দ্বিতীয় কথা হলোঃ সে পোশাককে ভূষণ হতে হবে। পোশাক পরিধান করলে যেন দেখতে সুন্দর দেখায়, অসুন্দর যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভূষণ ও শোভার ব্যাপারে মানুষের রুচি পরিবর্তনশীল এবং স্থান, কাল ও মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে রুচির ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য ও পরিবর্তন সূচিত হতে পারে। যার বাস্তব প্রমান আমরা রাসূল (সাঃ)-এর জীবনের মধ্যেই পাব; যেমনঃ আমাদেরকে বলা হয় মাছে ভাতে বাঙ্গালী কারণ ভৌগলিক অবস্থার কারনে আমরা মাছ পছন্দ করি এবং এটাই আমাদের রুচি কিন্তু রাসুল (সাঃ)-এর মাছের গন্ধ পছন্দ নয় তাই তিনি মাছ খেতেন না। তাই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গার রুচি বিভিন্ন রকম। অতএব কোরআনের মতেও পোশাকের ধরন ও আকৃতি পরিবর্তনশীল তবে সেটা পরিমার্জিত, সুন্দর ও সভ্য হতে হবে। তৎকালীন আরব সমাজে সাধারণত একখানি কাপড় দিয়েই সমস্ত শরীর ঢাকার রীতি চালু ছিল। কখনো এমন একটি কোর্তা পড়া হত যা শরীরের উপরের অংশ থেকে নীচের অংশ পর্যন্ত ঢেকে ফেলত। এমনকি বর্তমানেও আরবদের পোশাক এ রকমই। নিচে অন্তর্বাস পড়ে তার উপর তার উপর দিয়ে পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত একটি লম্বা কোর্তা পরিধান করে থাকেন , যাকে অনেকে আবার আলখাল্লা নামে চিনেন। আর এটাই আরবদের নিত্যদিনের পোশাক, তারা কোনোদিন এই পোশাককে সুন্নতী পোশাক বলে পরিচয় দেননি এবং এ ধরনের কোন দাবীও তারা করে না কারণ এটা তাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পোশাক; কোন সুন্নতী পোশাক নয়।
কিন্তু একটি লুঙ্গি বা পাজামা পরিধান করার পরও পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত একটি লম্বা কোর্তাও উপর থেকে ঝুলিয়ে পড়তে হবে এবং এরূপ কোর্তা পরিধান করা সুন্নত বা এই ধরনের পোশাক সুন্নতী পোশাক – এই কথা তারা কোথা থেকে পেল? কোরআন ও হাদীসে তো এর কোন সমর্থন নেই। কোরআন ও হাদীসের ভিত্তি ছাড়া এরূপ যে সমস্ত কথা ইসলাম ধর্মের নামে চালু রয়েছে তা মূলত তথাকথিত মৌলভী ও পীরদের দ্বারা সৃষ্ট মনগড়া কথা, যা মেনে চলার যেমন কোন যুক্তি নেই, তেমনি নেই কোন বাধ্যবাধকতা। বরং শরিয়াহ-তে সুন্নত প্রমাণিত নয় এরূপ একটি পোশাককে সুন্নতী লেবাস বলে চালিয়ে দেয়ার মানে হলো রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যা বলার শামিল। আর লুঙ্গি বা পাজামা পড়ার পরেও এ ধরনের লম্বা পোশাক তৈরিতে যেমন কাপড় বেশী লাগে তেমনি অর্থও বেশী খরচ হয়। অথচ কোরআন শরীফে এরূপ বেহুদা খরচ করা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে এবং কোন কিছু অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়াও হাদীস থেকে পাওয়া যায় যে রাসূল (সাঃ) এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থেকে ছিলেন এবং লুঙ্গি বা পায়জামা পড়লে উপরে শুধুমাত্র জামা পড়েছিলেন (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৭, ৩৫৭৯; প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই । (সূরা বনী ইসরাঈল; আয়াত নং- ২৭)
অপব্যায় করো না, অপব্যায়কারীকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ; আয়াত নং – ৩১)
সমাজে এক শ্রেণীর লোকেরা এই ধরনের পোশাক পড়ে মনে মনে ভাবে, সুন্নাতী পোশাক পরিধান করেছি এবং খাঁটি সুন্নী হয়েছি। রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত কে পুরুষ নারী সবাইকেই মেনে চলতে হবে, যেমনঃ মেসওয়াক করা সুন্নত। কিন্তু এই সুন্নত কিন্তু শুধু পুরুষদের জন্য নয় বরং নারী পুরুষ সকলের জন্য। কিন্তু নারীদের এই সুন্নত পালন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কেন? এই ধরনের পোশাক যদি সুন্নতী পোশাক হয় তাহলে নারীরাও কি এটা সুন্নতী পোশাক হিসেবে পড়তে হবে নাকি তথাকথিত মৌলভীরা এখন নারীদের জন্য নতুন করে সুন্নতী পোশাক আবিষ্কার করবেন?
পাঠক বন্ধুরা, এটা ভাবা ঠিক হবে না যে আমি এই পোশাকের বিরোধী। কখনোই নয় বরং আমি অবশ্যই স্বীকার করি যে পৃথিবীতে যে কয়েকটি সুন্দর, নম্র, ভদ্র, শালীন ও সভ্য পোশাক রয়েছে এটা তার মধ্যে একটি। আমার প্রতিবাদ তো শুধু এটাকে নির্দিষ্ট করে সুন্নতী পোশাক হিসেবে দাবী করার বিরুদ্ধে এবং এই পোশাক দ্বারা যারা সাধারণ মানুষের কাছে প্রতারণা করে শিরক ও বিদ’আত পূর্ণ কাজ করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে। আল্লাহ্ অবশ্যই আমার আমার মনের খবর জানেন এবং তিনি অবশ্যই আমার এবং সবার কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন।
### এছাড়াও পোশাক নিয়ে ব্যবসা এবং অতিরঞ্জন কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর পর আছে টুপি। বলা হয় টুপি পড়া সুন্নত। কথাটা কিন্তু পুরোপুরি সঠিক নয়, আসল কথা হলো টুপি পড়া সুন্নত নয় বরং যে কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা সুন্নত (প্রমান দেখুন – সহীহ বোখারী শরীফ, ৯ম খণ্ড, পরিচ্ছেদ নং- ২৩৪৫, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এবং এর জন্য একমাত্র টুপিই আবশ্যক নয় বরং টুপি, পাগড়ি, যে কোন কাপড়, রুমাল, ইত্যাদি দিয়ে মাথা ঢাকলেই সুন্নত পালন করা হবে।
আশা করি, আমরা সবাই ইসলামে পোশাকের বিধান সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি। আর সবাই সচেতন থাকবেন যারা পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বা নিজেদেরকে একটি বিশেষ জাত বা শ্রেণি হিসেবে মানূষের সামনে উপস্থাপন করে বিশেষ ফায়দা লুটার চেষ্টা করে তাদের থেকে নিজেদেরকে সাবধান রাখতে পারবেন। সাথে সাথে প্রয়োজনীয় দলিলগুলো মনে রেখে তাদের উচিত জবাব দিতেও পারবেন। ইন শা আল্লাহ্।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন !!!
(সংকলিত)
============
*** সুন্নতী পোশাক!!!
সুন্নত বলতে আমরা কি বুঝি আল্লাহ্র নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে রাসূল (সাঃ) যে সমস্ত কাজের আদেশ বা নির্দেশ দিয়েছেন কিংবা নিষেধ করেছেন , ওহীর নির্দেশ অনুযায়ী নিজে আমল করেছেন এবং অন্যের কাজে সম্মতি দিয়েছেন ঐগুলোই হলো ইসলামের মধ্যে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত , যা সমস্ত মুমিন মুসলিমদের মানা উচিৎ। কিন্তু ওহীর নির্দেশ ব্যাতীত রাসুল (সাঃ)
নিজে মানুষ হিসেবে যা করেছেন এবং ঐ সমস্ত কাজ যা মানুষ হিসেবে যে কোন লোকই করে থাকে তা ইসলামী শরীয়তে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত নয় বরং মুবাহ অর্থাৎ ঐচ্ছিক , যে কেউ চাইলে করতে পারে আবার না করলেও কোন ধরনের সমস্যা নেই। সর্বসাধারণের বুঝার জন্য উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে বলি , যেমনঃ রাসূল (সাঃ) তার দুধমার দুধ পান করেছেন কিন্তু দুধমার দুধ পান করা সুন্নত বলা যাবে না ; তিনি মাছ খেতেন না কারণ মাছের গন্ধ তার পছন্দ হতো না তাই বলে মাছ
না খেলে সুন্নত পালন হবে এ কথা বলা যাবে না। আবার তিনি হেরা গুহায় ধ্যান করেছেন কিন্তু হেরা গুহায় ধ্যান করাকে সুন্নত বলা যাবে না। তিনি জীবনে প্রথমবার একজন বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেছেন কিন্তু বিধবা মহিলাকে বিবাহ করা সুন্নত এ কথা বলা যাবে না। তিনি ২৫ বৎসর বয়সে বিবাহ করেছেন তাই বলে ২৫ বৎসরে বিবাহ করা সুন্নত এ কথা বলা যাবে না। তার বিবাহের সংখ্যা ১১ কিন্তু একের অধিক বিবাহ সুন্নত বা সুন্নত পালন করতে হলে ১১ টি বিবাহ করতে হবে এই ধরনের কথা বলা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। এবং এই সমস্ত কাজ পালন করা কিংবা পালন করলে অবশ্যই সওয়াব পাওয়া যাবে এরূপ মনে করা ইসলামের শরিয়াহ সম্পর্কে মূর্খ ও অজ্ঞতার পরিচয় বহন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে এটা বিদ’আত হিসেবেও গণ্য হবে।
সুন্নতী পোশাক এর বিশ্লেষণঃ
পোশাক পরিধান করা মানব সভ্যতার একটি অংশ। পৃথিবীর সকল সভ্য মানুষই পোশাক পরিধান করে থাকে। তবে দেশভেদে বিভিন্ন দেশের পোশাক বিভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশের দেশীয় পোশাক লুঙ্গি যেমন মুসলিমরা পরিধান করে। তেমনি হিন্দু, খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধসহ অমুসলিমরাও লুঙ্গি পরিধান করে। আরব দেশে যে পোশাক পুতুল বা মূর্তি পূজারী, নাসারা, ইহুদী, কাফির, মুশরিকরা পরিধান করত, সে দেশের দেশীয় প্রচলিত পোশাক হিসেবে আমাদের নবী (সাঃ)ও তা পরিধান করতেন। নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে নবী (সাঃ) যে পোশাক পড়তেন, নবুয়ত প্রাপ্তির পর ওহী প্রাপ্ত হয়ে আমাদের নবী (সাঃ) পুরাতন পোশাক ছেড়ে দিয়ে নতুন নিয়মের, নতুন ডিজাইনের কোন পোশাকের ব্যাপারে আদিষ্ট হয়ে তা পরিধান করতে শুরু করেননি বরং সেই পোশাক সহ পৃথিবীর সকল পোশাকের মধ্যে কিছু সীমারেখা ও দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন যা এই রিসার্চটিতে পরবর্তীতে উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষ ও নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বে ৪০ বৎসর ধরে যে পোশাক পরিধান করেছেন, নবুয়ত প্রাপ্তির পরও তিনি তা জীবনের বাকী ২৩ টি বৎসর পরিধান করে গেছেন। তিনি নিজের জন্য কিংবা তার সাহাবীর অথবা উম্মতের জন্য কোন নির্দিষ্ট ধরনের সুন্নতী পোশাক নির্ধারণ করে দেননি বরং কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সাঃ) একবার বলেছিলানঃ যে জাতি যে সভ্য পোশাক পরিধান করে সেটাই হলো সেই মুসলিমদের পোশাক। অত্যন্ত ন্যায় ও যুক্তিপূর্ণ কথা, কারণ মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহ্ তা’আলা সমগ্র মানব জাতির জন্য সর্বশেষ রাসূল করে পাঠিয়েছেন। যদি তিনি কোন পোশাককে নির্দিষ্ট করে যেতেন তাহলে তা কিছু মানুষ জাতির জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াত কারণ নির্দিষ্ট কোন দেশের পোশাক অন্য কোন দেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য না’ও হতে পারে। এদেশের মৌলভী বা হুজুরদের পরিধানকৃত পাঞ্জাবী বা তথাকথিত নামধারী সুন্নতী পোশাক যদি আসলেই রাসুল (সাঃ) এর সুন্নতী পোশাক হিসেবে ধরে নেয়া হয় তাহলে সাইবেরিয়ার মতো পৃথিবীর অন্যান্য শীতপ্রধান এলাকার মানুষদের জন্য এ পোশাক নিশ্চিত মৃত্যু ডেকে আনত।
আমাদের দেশের কিছু মৌলভীগন বহু ক্ষেত্রেই সহীহ হাদীসের বর্ণনা থাকা সত্তেও রাসুল (সাঃ) এর বহু আদেশ নিষেধ মানেন না। অথচ পোশাকের মধ্যে রাসূল (সাঃ) এর সুন্নত আবিষ্কার করলেন। লম্বা কলিদার সাদা কোর্তা পাঞ্জাবীকে তারা সুন্নতী পোশাক বলে দাবী করেন এবং সেটা পরিধান করে নিজেদেরকে সুন্নী বলে গর্ববোধ করেন। তাদের আচরণ দেখলে মনে হয় পৃথিবীতে একমাত্র তারাই যেন সুন্নত পালন করেন। আর যারা এই ধরনের পোশাক পরিধান না করে ইসলাম নিয়ে কথা বলে এমনকি কোরআন ও সহীহ হাদীসের কথা বলে তাদেরকে এইসব মৌলভীগন ওয়াহাবী, সুন্নতের বিরোধী, খ্রিষ্টান ইহুদি ও আমেরিকার দালাল, ইত্যাদি কটু ও অশ্লীল সম্বোধন দ্বারা মন্তব্য করে থাকেন এবং ফতোয়া দিয়ে থাকেন যে এই ধরনের মানুষের কথা শোনা যাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। স্বাধীনতা পূর্বকালে হিন্দু জমিদাররা পাঞ্জাবী পরিধান করত। বর্তমানেও ভারতের হিন্দু রাজনীতিবিদসহ অনেক অমুসলিম ভারতবর্ষের পোশাক হিসেবে পাঞ্জাবী পরিধান করে থাকে।
১৪০০ বৎসর পূর্বে আরবের কোথাও পাঞ্জাবীর প্রচলন ছিল না কিংবা বর্তমানেও এর প্রচলন নেই। তাই এই ধরনের পোশাককে সুন্নতী পোশাক বলে চালিয়ে দিতে চাইলে তা রাসূল (সাঃ) এর নামে মিত্থা অপবাদ দেয়া হবে। আর রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ যে আমার প্রতি স্বেচ্ছায় মিত্থারোপ করে সে যেন তার স্থান জাহান্নাম করে নেয়। আমার নিজের চোখে অনেক মৌলভীদের দেখেছি তারা বহু ক্ষেত্রে কোরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণনা থাকা সত্তেও রাসুল (সাঃ) এর বহু আদেশ নিষেধ মানেন না। রাসুল (সাঃ) ভিক্ষা করা পছন্দ করতেন না। কিন্তু ভিক্ষুকদের মতো আমাদের দেশের কিছু মৌলভীদের দেখা যায় তথাকথিত এ সুন্নতী পোশাক অর্থাৎ পায়জামা পাঞ্জাবীর সাথে টুপি পরিধান করে এই পোশাককে পুঁজি করে নানা শিরক ও বিদ’আতপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন এবং নিজেদের পকেট ভর্তি করছেন, যেমনঃ মিলাদ মাহফিল, কুলখানি, চল্লিশা, কোরআনখানী, বিভিন্ন ধরনের খতম, উরশ, ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে আমি নিজে অনেক মৌলভীদেরকে কোরআনের আয়াতসহ সহীহ হাদীসের নাম, খন্ড, হাদীস ও পৃষ্ঠা নম্বরসহ বরাত দিয়ে কোরআন হাদীসের কথা বলেছি। তখন প্রায় সবাই বাপ দাদা ও পীরদের দোহাই দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেছেন। এই হলো আমাদের দেশের সুন্নী গর্ববোধ করা মৌলভীদের নমুনা। রাসুল (সাঃ) এর সময় আরবে মুসলিমদের সংখ্যা ছিল খুব কম। মুসলিম, ইহুদী, খ্রিষ্টান, মূর্তিপুজারী, কাফির, মুশরিক, প্রভৃতি আরববাসী এখন যে পোশাক পরিধান করছে প্রায় ১৪০০ বৎসর পূর্বেও ঐ পোশাক পরিধান করত। তাহলে স্পষ্টতই এ ধরনের পোশাক আরবের সংখ্যাগরিষ্ঠের পোশাক এবং শুধু রাসুল (সাঃ) এর একার পোশাক ছিল না।
ভারত উপমহাদেশসহ বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন মুসলিম দেশ সুন্নতী পোশাক আবিষ্কার করেননি। ইউরোপ, আমেরিকা সহ পৃথিবীর মুসলিম দেশ যথা সৌদি আরব, কুয়েত, আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের মুসলিমরা তাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পোশাক পরিধান করে এবং কোন ধরনের সুন্নতী পোশাকের আবিষ্কার করেনি। সুন্নতী নামের পোশাক শুধু ভারত উপমহাদেশের মৌলভীগন আবিষ্কার করে ফেললেন। হিন্দুদের ভগবানের কাছে আরাধনা পৌছানোর জন্য তাদের বিভিন্ন গোত্রের পৃথক পৃথক ধর্মযাজক, গুরু, গোঁসাই, ঠাকুর ও পুরোহিত রয়েছে। কিন্তু ইবাদাত করে আল্লাহ্র কাছে পৌছানোর জন্য মুসলিমদের এরূপ কোন ঠাকুর, পুরোহিত বা মৌলভী, হুজুর প্রথার ব্যবস্থা ইসলামের শরিয়াহতে নেই। তাই তাদের মত নির্দিষ্ট কোন ডিজাইনের বা আকারের পোশাকও নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দুদের ঠাকুর ও পুরোহিতদের মত এই স্থান দখল করে নিয়েছে আমাদের সমাজের কিছু পীর ও মৌলভীগন। তারা ইসলাম ধর্মের নামে তাদের ব্যবসায়ে হিন্দুদের রীতিনীতি ও কায়দায় একটি পৃথক পোশাকের প্রয়োজন উপলব্ধি করলেন এবং সেটা সুন্নাতী পোশাক বলে চালিয়ে দিলেন। তারা এই তথাকথিত সুন্নতী পোশাক দ্বারা তাদের শিরক ও বিদ’আত পূর্ণ অনুষ্ঠান প্রচলন করে দিলেন ধর্মের নামে তাদের ব্যবসার জন্য। ঐ সমস্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন ধর্মীয় অনুশাসন থেকে দূরে থাকা নীতিবিবর্জিতভাবে আয় করার জন্যে লোকদের সহজভাবে জান্নাত পাওয়ার পথ দেখানোর মিত্থা প্রলোভন দেখাতে সক্ষম হলো, তেমনি অন্যদিকে তারা তাদের পেট পূজার ব্যাবস্থা করে পকেট ও পেটকে স্ফীত করার সুযোগ করে নিলো। অথচ মাদ্রাসা থেকে তারা যে পাঠ শিখে আসলো যে, ধর্মীয় আমলের জন্যে কোন টাঁকা পয়সা গ্রহন করা হারাম ; তা মাদ্রাসার গণ্ডি থেকে বের হয়েই ভুলে গেল। কি সুন্দর শিক্ষা, আর কি সুন্দর তার বাস্তবায়নের নমুনা। তাদের রোজগারকে নিশ্চিত করার জন্য এ নিয়মও বানানো হলো যে, ইসলামের নামে ঐ সমস্ত শিরক ও বিদ’আতী অনুষ্ঠানগুলো মাদ্রাসা পড়ুয়া মৌলভী কিংবা যত্রতত্র গজিয়ে উঠা পীরদের দ্বারা সমাধা করতে হবে, যেমনিভাবে হিন্দু রীতিনীতিতে ঠাকুর বা ব্রাহ্মণ ছাড়া পূজা করার অধিকার কোন সাধারণ হিন্দুর নেই। ঠাকুরদের মত তাদেরকেও টাঁকা কড়ির সাথে ভুরিভোজের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে যে এক ধরনের পোশাক তথাকথিত সুন্নতী পোশাক বলে প্রচলিত আছে তা যদি কেউ পরিধান না করে তাহলে তাকে সুন্নত বিরোধী, ফাসেক বলে বিবেচনা করা হয় এবং এমন লোক যদি তথ্যসূত্র ও সনদসহ ইসলাম প্রচার করে তাহলেও তার কথা শোনা জায়েয হবে না বলেও কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করে থাকেন।
সুন্নতী পোশাক বলতে সত্যিই কি সাদা লম্বা কলিদার জামা, লম্বা পাঞ্জাবী, লম্বা কোর্তা, ইত্যাদিকে বুঝায়??? যেগুলোকে সুন্নতী পোশাক বলা হয় সেটার দলীল কি???
*** পোশাক সম্পর্কিত ইসলামের শরিয়াহর দলীলসমূহ
পোশাক এর ব্যাপারে ইসলামের শরিয়াহতে যে কয়েকটি দলীল রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি হলোঃ
হে আদম সন্তান ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য পোশাক সৃষ্টি করেছি যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে এবং যা হবে ভূষণ। আর তাকওয়ার পোশাক , সেটাই কল্যাণময়। এ হচ্ছে আল্লাহ্র আয়াতসমূহের অন্যতম ; যাতে তারা উপদেশ গ্রহন করে। ( সূরা আ’রাফ , আয়াত নং- ২৬)
হে আদম সন্তান ! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পোশাক পরিধান কর ... কিন্তু আপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না। (সূরা আ’রাফ , আয়াত নং- ৩১)
পাঠক লক্ষ্য করুন উপরের আয়াতে আল্লাহ্, রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নতী পোশাক না বলে সুন্দর পোশাক এর কথা বললেন; কারণ আল্লাহ্ সুন্নতী পোশাক-এর নামে কোন নির্দিষ্ট পোশাককে নির্ধারণ করেননি। আর যদি সুন্নতী পোশাক বলে কিছু থাকতোই তাহলে আল্লাহ্ কেন সুন্নতী পোশাকের কথা না বলে সুন্দর পোশাকের কথা বললেন, অথচ আল্লাহ্ কোরআনে বলেনঃ আমি (আল্লাহ্) কোন কিছু এই কোরআনে লিপিবদ্ধ করতে বাদ রাখিনি (সূরা আন’আম , আয়াত নং- ৩৮)। হয়ত তারা এখন বলতে চাইবে যে এই সুন্দর পোশাক বলতে আল্লাহ্ রাসূল (সাঃ)-এর পোশাককে বুঝিয়েছেন; তার জবাবে বলব যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেই যে এই সুন্দর পোশাক বলতে বুঝায় রাসুল (সাঃ)-এর পোশাক ; তাহলে ইউসুফ (আঃ) এর জামা (সূরা ইউসুফ , আয়াত নং- ১৮) এবং আয়েশা (রা) ও ফাতেমা (রা) সহ অন্যান্যরা যে পোশাক পড়েছেন সেটা কি সুন্দর পোশাক নয়, তারা তো রাসুল (সাঃ)-এর মতো পোশাক পড়েননি। তাহলে কি তারা সুন্নত পালন করেননি? তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, রাসুল (সাঃ) পোশাক ছাড়াও আরও সুন্দর পোশাক রয়েছে এবং আল্লাহ্ তা পড়ার অনুমতি দিয়েছেন, তা-ও নামাযের মধ্যে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ ......যা ইচ্ছা পরিধান করো যতক্ষণ না তাতে অবচয় বা অহংকারের সংযোগ না ঘটে। (প্রমান দেখুন- সহীহ বোখারী শরীফ, ৯ম খণ্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লেবাস, পরিচ্ছেদ নং- ২৩৩০, পৃষ্ঠা নং- ৩১১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৬০৫, পৃষ্ঠা নং- ৩২১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
রাসূল (সাঃ)-এর ইয়ামনী দেশের চাদর অনেক পছন্দ ছিল এবং তিনি তা পরিধান করতেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮০, পৃষ্ঠা নং- ১৫৪, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার ; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খন্ড, হাদীস নং- ৩৫৫২ , ৩৫৫৩ , প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
রাসুল (সাঃ) রোমের দেশের পশমী চাদর ও জুব্বা পড়েছেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮৪, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৬ , ৩৫৬৩ , ৩৫৬৪ , প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন; বোখারী - রেওয়ায়াতে মিশকাত, ৮ম খণ্ড, হাদীস নং- ৪১১৬)
রাসুল (সাঃ) লুঙ্গি পড়তেন। (সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮২, পৃষ্ঠা নং- ১৫৫, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫১, ৩৫৬৫, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
রাসুল (সাঃ) এর কাছে পোশাক-এর মধ্যে কামিজ বা জামা ছিল সবচেয়ে প্রিয় এবং পরিধান ও করেছেন অনেক, এমনকি তাঁর ইন্তেকালের সময়ও জামা ও লুঙ্গি পরিধান করা ছিল। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৭৫, ৩৫৭৬; প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
রাসূল (সাঃ) বেশীর ভাগ সময়ই স্বল্প দৈর্ঘ্যের জামা বা কামিজ পড়তেন এবং এর সাথে পায়জামা পড়তেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৭, ৩৫৭৯; প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
মুসলিমদের পোশাকের উপর কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে যে নিয়মনীতি পাওয়া যায় তা হলোঃ
(০) পোশাকের সীমা নির্ধারণ এবং নিরীক্ষণঃ
শুধু এই নিয়মটাই পুরুষ ও মহিলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন। পুরুষের জন্য “সতর” হলো নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। এই সতর ফরজ অর্থাৎ ঢাকতেই হবে আর পায়ের গোড়ালির উপর পর্যন্ত কাপড় রাখা এবং মাথা ঢেকে রাখা সুন্নত। এছাড়া নারীর জন্য মুখমণ্ডল ও হাতের পাতা ছাড়া শরীরের সকল অংশই সতর। এই সতর ফরজ অর্থাৎ ঢাকতেই হবে। মুখমণ্ডল ও হাত ঢেকে রাখা উত্তম তবে না রাখতে পারলে কোন গুনাহ নেই। শুধু এই বিধানটা ছাড়া নিচের বাকি ৫টি বিধান নারী পুরুষের জন্য একই রকম। (সূরা আ’রাফ; সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন; সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৭১, ৫৩৭৪, ৫৩৭৫, ২৩৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন )
(১) পোশাকের আকার ও প্রশস্ততাঃ
পোশাক যেন ছোট, আঁটসাঁট এবং সংকীর্ণ না হয়। এমন পোশাক পড়া যাবে না যাতে শরীরের অবয়ব বা গঠন বুঝা যায় বা শরীরের সাথে যেন সেটে না থাকে। এ ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা পোশাকই উত্তম সেটা যেকোন সভ্য পোশাকই হতে পারে। ( সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৭৬, ৫৩৭৯, ৫৩৮১, ৫৩৮৩, ৫৩৮৪, ৫৩৮৫, ৫৩৮৮, ৫৩৯৬, ৫৩৯৭, ৫৪৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন )
(২) পোশাকের স্বচ্ছতাঃ
পোশাকের কাপড় এতটা স্বচ্ছ বা পাতলা হওয়া যাবে না যাতে করে শরীরের ভিতরটা দেখা যায় বা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ পোশাকের কাপড় এ রকম হতে হবে যাতে এক পাশ থেকে অপর পাশে না দেখা যায়। (প্রমান দেখুন – সূরা আহযাব, আয়াত নং- ৩৩; সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং-৫৪০৪, ৫৪০৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৯, ৩৫৬০, ৩৫৬১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৩) আকর্ষণীয়তাঃ
পোশাক ওই ধরনের আকর্ষণীয় বা চাকচিক্য হওয়া যাবে না যা বিপরীত লিঙ্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং নিজের মধ্যে অহংকারের সৃষ্টি করে। তবে নিজ স্বামী বা স্ত্রীর জন্য পড়া যাবে এতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু মাহরাম ব্যাক্তি ছাড়া অন্য কারো সামনে প্রদর্শিত করা যাবে না। উল্লেখ্যঃ মাহরাম ব্যাক্তি বলতে সেইসব ১৪ প্রকারের মানুষদেরকে বুঝায় যাদের সাথে বিবাহ হারাম, যেমনঃ আপন পিতা মাতা, ভাই, বোন, ইত্যাদি। (সূরা আহযাব, আয়াত নং- ৫৫; সূরা নূর, আয়াত নং- ৩১; সহীহ বোখারী, ৫ম খণ্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস, হাদীস নং- ৫৩৭২, ৫৩৭৩, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৪) বিপরীত শ্রেণীর পোশাক না হওয়াঃ
নারী এমন পোশাক পড়বে না যা পুরুষরা পরে, আবার পুরুষেরাও এমন পোশাক পড়বে না যে পোশাক নারীরা পরে। অনুরূপ পুরুষ নারী সাজে এবং নারী পুরুষ সাজে সজ্জিত হবে না। (সহীহ বোখারী শরীফ, ১০ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৪৬৬, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(৫) ভিন্ন ধর্মের সাদৃশ্য পোশাক না হওয়াঃ
পোশাকে ভিন্ন ধর্মের কোন প্রতীকী চিহ্ন থাকা যাবে না, বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের ধর্মীয় লেবাস হিসেবে যা পরে তার অনুরূপ হওয়া যাবে না। যেমনঃ হিন্দুদের ওম চিহ্ন, খ্রিষ্টানদের ক্রস চিহ্ন, ইত্যাদি। এছাড়াও কোন মূর্তির বা প্রানীর ছবি থাকা যাবে না। এছাড়া অন্য জাতির দেশিয় সভ্য পোশাক পড়লে কোন সমস্যা নেই, যেমনঃ আরবরা বাংলাদশের দেশিয় পোশাক লুঙ্গি পড়তে পারবে, আবার বাঙ্গালীরা পাকিস্তানের দেশিয় পোশাক কাবলি পড়তে পারবে, এছাড়াও শীতকালীন দেশ সমূহের পোশাক কোট বা ব্লেজার পড়তে পারবে তবে এ ক্ষেত্রে উপরের বিধানগুলো মেনে চলতে হবে। (প্রমান দেখুন – সহীহ বোখারী শরীফ, ৯ম খণ্ড, পরিচ্ছেদ নং- ২৩৩০, হাদীস নং- ৫৫২৫, ৫৫২৬, ৫৫২৭, ৫৫২৮, ৫৫৩০, ৫৫৩৪, ৫৫৩৫, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন; সহীহ মুসলিম শরীফ, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৫০, ৫৩৫১, ৫৩৫২, ৫৩৫৩, ৫৩৫৪, ৫৩৫৫, ৫৩৫৬, ৫৩৫৭, ৫৩৫৮, ৫৩৫৯, ৫৩৬০, ৫৩৬১, ৫৩৬২, ৫৩৬৩, ৫৩৬৪, ৫৩৬৫, ৫৩৬৬, ৫৩৬৭, প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার; সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৬০৫, পৃষ্ঠা নং- ৩২১, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
(***) অন্যান্য বিধানবলীঃ
এগুলি ছাড়াও নারী ও পুরুষের জন্য অন্যান্য যেসব বিধান আছে তা পর্যায়ক্রমে বর্ণনা করা হলো ; পুরুষঃ রেশমি কাপড় পড়া নিষিদ্ধ (সহীহ মুসলিম শরীফ , ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২৪৯ , পৃষ্ঠাঃ ১৪৪ , প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার), তবে চর্ম রোগের কারনে পড়ার অনুমতি আছে (সহীহ মুসলিম শরীফ , ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫৩৬৮ , ৫৩৬৯ , ৫২৭০ , ৫২৭১ , পৃষ্ঠাঃ ১৫১ , প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার)। স্বর্ণ পরিধান করা নিষিদ্ধ (সহীহ মুসলিম শরীফ , ৭ম খণ্ড, হাদীস নং- ৫২২৭, ৫২২৮ , ৫২২৯ , প্রকাঃ ইসলামিক সেন্টার) ইত্যাদি। নারীঃ উল্কী বা ট্যাটু , ভ্রু প্লাগ , চুল মুণ্ডন ও পরচুলা বা আলগা চুল বা উইগ পরা হারাম এবং যারা পড়বে তাদের উপর আল্লাহ্ ও নবী (সাঃ) এর অভিশাপ [প্রমান দেখুনঃ- (১) সহীহ বোখারী শরীফ , ৯ম খণ্ড, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লেবাস , পরিচ্ছেদ নং- ২৪১১ , ২৪১২ , ২৪১৩ , ২৪১৪ , ২৪১৫ , ২৪১৬ , হাদীস নং- ৫৫০৭ থেকে ৫৫২৪ (মোট ১৮ টি সহীহ হাদীস) , পৃষ্ঠা নং- ৩৭০ থেকে ৩৭৬ , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; (২) সহীহ মুসলিম শরীফ , ৫ম খন্ড , অধ্যায়ঃ পোশাক ও সাজসজ্জা , অনুচ্ছেদ নং- ৩৩ , হাদীস নং- ৫৪৫৮ থেকে ৫৪৭৪ (মোট ১৭ টি সহীহ হাদীস) , পৃষ্ঠা নং- ১৫০ থেকে ১৫৪ , প্রকাশনীঃ আ.হা.লাইব্রেরী / হাদীস নং- ৫৩৮২ থেকে ৫৩৯৬ (মোট ১৫ টি সহীহ হাদীস) , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ / হাদীস নং- ৫৪০২ থেকে ৫৪১৮ (মোট ১৭ টি সহীহ হাদীস) , প্রকাশনীঃ বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ; (৩) তিরমিযী শরীফ , হাদীস নং- ২৭৮১ , ২৭৮২ , ২৭৮৩ , পৃষ্ঠা নং- ১৯০ , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; (৪) সুনানে আবু দাউদ শরীফ , হাদীস নং- ৪১২২ থেকে ৪১২৬ (মোট ৫ টি হাদীস) , পৃষ্ঠা নং- ৮৯৩ , প্রকাশনীঃ মিনা বুক হাউজ ; (৫) সুনানে নাসাঈ শরীফ , হাদীস নং- ৫০৪৮ , ৫০৯১ থেকে ৫১১১ (মোট ২২ টি হাদীস) , পৃষ্ঠা নং – ৫০২ থেকে ৫০৮ , প্রকাশনীঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ; এখানে সর্বমোট মাত্র ৬৫ টি হাদীস এর তথ্যসুত্র উল্লেখ করা হল, এছাড়াও এই সম্পর্কে আরো শত শত হাদীস রয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য হাদীস শাস্ত্র অধ্যায়ন করুন।]
মোট কথাঃ
### পোশাক এমন হতে হবে যা মানুষের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে।
দ্বিতীয় কথা হলোঃ সে পোশাককে ভূষণ হতে হবে। পোশাক পরিধান করলে যেন দেখতে সুন্দর দেখায়, অসুন্দর যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভূষণ ও শোভার ব্যাপারে মানুষের রুচি পরিবর্তনশীল এবং স্থান, কাল ও মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে রুচির ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য ও পরিবর্তন সূচিত হতে পারে। যার বাস্তব প্রমান আমরা রাসূল (সাঃ)-এর জীবনের মধ্যেই পাব; যেমনঃ আমাদেরকে বলা হয় মাছে ভাতে বাঙ্গালী কারণ ভৌগলিক অবস্থার কারনে আমরা মাছ পছন্দ করি এবং এটাই আমাদের রুচি কিন্তু রাসুল (সাঃ)-এর মাছের গন্ধ পছন্দ নয় তাই তিনি মাছ খেতেন না। তাই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গার রুচি বিভিন্ন রকম। অতএব কোরআনের মতেও পোশাকের ধরন ও আকৃতি পরিবর্তনশীল তবে সেটা পরিমার্জিত, সুন্দর ও সভ্য হতে হবে। তৎকালীন আরব সমাজে সাধারণত একখানি কাপড় দিয়েই সমস্ত শরীর ঢাকার রীতি চালু ছিল। কখনো এমন একটি কোর্তা পড়া হত যা শরীরের উপরের অংশ থেকে নীচের অংশ পর্যন্ত ঢেকে ফেলত। এমনকি বর্তমানেও আরবদের পোশাক এ রকমই। নিচে অন্তর্বাস পড়ে তার উপর তার উপর দিয়ে পায়ের গিরার উপর পর্যন্ত একটি লম্বা কোর্তা পরিধান করে থাকেন , যাকে অনেকে আবার আলখাল্লা নামে চিনেন। আর এটাই আরবদের নিত্যদিনের পোশাক, তারা কোনোদিন এই পোশাককে সুন্নতী পোশাক বলে পরিচয় দেননি এবং এ ধরনের কোন দাবীও তারা করে না কারণ এটা তাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় পোশাক; কোন সুন্নতী পোশাক নয়।
কিন্তু একটি লুঙ্গি বা পাজামা পরিধান করার পরও পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত একটি লম্বা কোর্তাও উপর থেকে ঝুলিয়ে পড়তে হবে এবং এরূপ কোর্তা পরিধান করা সুন্নত বা এই ধরনের পোশাক সুন্নতী পোশাক – এই কথা তারা কোথা থেকে পেল? কোরআন ও হাদীসে তো এর কোন সমর্থন নেই। কোরআন ও হাদীসের ভিত্তি ছাড়া এরূপ যে সমস্ত কথা ইসলাম ধর্মের নামে চালু রয়েছে তা মূলত তথাকথিত মৌলভী ও পীরদের দ্বারা সৃষ্ট মনগড়া কথা, যা মেনে চলার যেমন কোন যুক্তি নেই, তেমনি নেই কোন বাধ্যবাধকতা। বরং শরিয়াহ-তে সুন্নত প্রমাণিত নয় এরূপ একটি পোশাককে সুন্নতী লেবাস বলে চালিয়ে দেয়ার মানে হলো রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যা বলার শামিল। আর লুঙ্গি বা পাজামা পড়ার পরেও এ ধরনের লম্বা পোশাক তৈরিতে যেমন কাপড় বেশী লাগে তেমনি অর্থও বেশী খরচ হয়। অথচ কোরআন শরীফে এরূপ বেহুদা খরচ করা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে এবং কোন কিছু অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়াও হাদীস থেকে পাওয়া যায় যে রাসূল (সাঃ) এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থেকে ছিলেন এবং লুঙ্গি বা পায়জামা পড়লে উপরে শুধুমাত্র জামা পড়েছিলেন (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩য় খণ্ড, হাদীস নং- ৩৫৫৭, ৩৫৭৯; প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই । (সূরা বনী ইসরাঈল; আয়াত নং- ২৭)
অপব্যায় করো না, অপব্যায়কারীকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন না। (সূরা আ’রাফ; আয়াত নং – ৩১)
সমাজে এক শ্রেণীর লোকেরা এই ধরনের পোশাক পড়ে মনে মনে ভাবে, সুন্নাতী পোশাক পরিধান করেছি এবং খাঁটি সুন্নী হয়েছি। রাসুল (সাঃ) এর সুন্নত কে পুরুষ নারী সবাইকেই মেনে চলতে হবে, যেমনঃ মেসওয়াক করা সুন্নত। কিন্তু এই সুন্নত কিন্তু শুধু পুরুষদের জন্য নয় বরং নারী পুরুষ সকলের জন্য। কিন্তু নারীদের এই সুন্নত পালন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কেন? এই ধরনের পোশাক যদি সুন্নতী পোশাক হয় তাহলে নারীরাও কি এটা সুন্নতী পোশাক হিসেবে পড়তে হবে নাকি তথাকথিত মৌলভীরা এখন নারীদের জন্য নতুন করে সুন্নতী পোশাক আবিষ্কার করবেন?
পাঠক বন্ধুরা, এটা ভাবা ঠিক হবে না যে আমি এই পোশাকের বিরোধী। কখনোই নয় বরং আমি অবশ্যই স্বীকার করি যে পৃথিবীতে যে কয়েকটি সুন্দর, নম্র, ভদ্র, শালীন ও সভ্য পোশাক রয়েছে এটা তার মধ্যে একটি। আমার প্রতিবাদ তো শুধু এটাকে নির্দিষ্ট করে সুন্নতী পোশাক হিসেবে দাবী করার বিরুদ্ধে এবং এই পোশাক দ্বারা যারা সাধারণ মানুষের কাছে প্রতারণা করে শিরক ও বিদ’আত পূর্ণ কাজ করে আসছে তাদের বিরুদ্ধে। আল্লাহ্ অবশ্যই আমার আমার মনের খবর জানেন এবং তিনি অবশ্যই আমার এবং সবার কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দিবেন।
### এছাড়াও পোশাক নিয়ে ব্যবসা এবং অতিরঞ্জন কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর পর আছে টুপি। বলা হয় টুপি পড়া সুন্নত। কথাটা কিন্তু পুরোপুরি সঠিক নয়, আসল কথা হলো টুপি পড়া সুন্নত নয় বরং যে কোন কিছু দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা সুন্নত (প্রমান দেখুন – সহীহ বোখারী শরীফ, ৯ম খণ্ড, পরিচ্ছেদ নং- ২৩৪৫, প্রকাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন) এবং এর জন্য একমাত্র টুপিই আবশ্যক নয় বরং টুপি, পাগড়ি, যে কোন কাপড়, রুমাল, ইত্যাদি দিয়ে মাথা ঢাকলেই সুন্নত পালন করা হবে।
আশা করি, আমরা সবাই ইসলামে পোশাকের বিধান সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছি। আর সবাই সচেতন থাকবেন যারা পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বা নিজেদেরকে একটি বিশেষ জাত বা শ্রেণি হিসেবে মানূষের সামনে উপস্থাপন করে বিশেষ ফায়দা লুটার চেষ্টা করে তাদের থেকে নিজেদেরকে সাবধান রাখতে পারবেন। সাথে সাথে প্রয়োজনীয় দলিলগুলো মনে রেখে তাদের উচিত জবাব দিতেও পারবেন। ইন শা আল্লাহ্।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন, আমীন !!!
(সংকলিত)