শবে বরাত

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
শবে বরাত
আবু আহমাদ সাইফুদ্দীন বেলাল থেকে
শেয়ার.
১. শবে বরাত আর্থ:
শব ফার্সী শব্দ যার অর্থ রাত। আর বরাত
শব্দ যদি ফার্সী ধরা হয়, তবে তার অর্থ-
হিসসা ও পরিমাণ এবং নির্দেশ।
আসলে খাজনা আদায়ের পরিমাণ ও
নির্দেশের রাতকে ফার্সীতে শবে
বরাত বলা হয়। এ ছাড়া বরাত শব্দটিকে
আরবী বরাআতুন ধরা হলে তার অর্থ হবে
সম্পর্কচ্ছেদ করা। যেমন আল্লাহ
তা‘য়ালা সূরা বারাতে
(তাওবাতে)
বলেন:বারাআতুন মিনাল্লাহি
ওয়ারাসূলিহী ইলাল্লাযীনা
আহাত্তুম মিনালমুশরিকীন অর্থ:
সম্পর্কচ্ছেদ করা হলো আল্লাহ ও তাঁর
রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরেকদের
সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ
হয়েছিলে। [সূরা তাওবাহ:১]
এ দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, শবে বরাত অর্থ
সম্পর্কচ্ছেদের রাত। আর এ রাতে যে সব
বিদাতের পাহাড় গড়া হয়েছে তা
দ্বারা আল্লাহর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ
ছাড়া অন্য কিছু ভাগ্যে জুটবে কী?
আর যদি বরাত অর্থ নাজাত ও মুক্তি
পাওয়া ধরা হয়, তবে সর্বপ্রকার শিরক
মুক্ত ঈমান ও হিংসা মুক্ত পরিস্কার অন-র
হওয়া জরুরি। আর এমটি প্রতি সোমবার ও
বৃহস্পতিবার হয়ে থাকে।
(ক) আবু সা‘লাবা আল-খুছানী [রা:]
থেকে বর্ণিত, নবী [সা:] বলেন: যখন
শা‘বানের মধ্য রাত হয় তখন আল্লাহ তাঁর
সৃষ্টিরাজির প্রতি উঁকি দেন। অত:পর
মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং
কাফেরদেরকে ঢিল দেন। আর
হিংসুকদের হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ না
করা পর্যন- সুযোগ দেন। [হাদীসটি
হাসান, সহীহুল জামে‘-আলবানী হা:
৭৮৩ ও সিলসিলা সহীহা-আলবানী হা:
১১৪৪]
(খ) মু‘আয ইবনে জাবাল [রা:] থেকে
বর্ণিত, নবী [সা:] বলেন:আল্লাহ তাঁর
সমস- সৃষ্টির (মানুষের) প্রতি ১৫
শা‘বানের রাতে উঁকি দেন। অত:পর
মুশরেক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী
ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।
[হাদীসটি সহীহ লিগাইরিহী,
সিলসিলা সহীহা-আলবানী:
৩/১৩৫-১৩৯ হা: ১১৪৪]
(গ) আবু হুরাইরা [রা:] থেকে বর্ণিত, নবী
[সা:] বলেন: প্রতি সোমবার ও
বৃহস্পতিবার আমল (আল্লাহর নিকট) পেশ
করা হয়। অত:পর আল্লাহ শিরককারী
ব্যতিত সকল মানুষকে ক্ষমা করে দেন।
কিন' যাদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ
রয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করেন না।
বলা হয়: তাদের দুইজনের মধ্যে
মীমাংসা হওয়া পর্যন- সুযোগ দাও।
তাদের দুইজনের মাধ্যে মীমাংসা
হওয়া পর্যন- সুযোগ দাও। [মুসলিম হা:
৪৬৫৩]
আর বরাত অর্থ ভাগ্য তথা শবে বরাত
মানে ভাগ্য রজনী বলার পক্ষে কোন
সঠিক প্রমাণ নেই। এ ছাড়া ভাগ্য
রজনীর আরবী শব্দ হলো: লাইলাতুল ক্বদর
যা আমাদের রমজানের শেষ দশকে
রয়েছে। তাই ভাগ্য রজনীর আরবী শব্দ
লাইতুল ক্বদর ব্যবহার না করে ফার্সী
বলার পেছনে রহস্য ও উদ্দেশ্য কী? আরো
মনে রাখতে হবে যে, আমাদের দ্বীন
আরবী অর্থাৎ- দ্বীনের মূল উৎস কুরআন ও
হাদীস আরবী ভাষায়। অতএব, ঘরের শত্রু
ইরানীদের ফার্সী শবে বরাত বলে
দিচ্ছে যে, ডাল মে কুচ কালা হায়।
আর শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী প্রমাণ
করার জন্য অপচেষ্টা করাও একটি বড়
অপরাধ।
২. শবে বরাত কী?
শবে বরাত বলতে আমাদের সমাজে
মনে করা হয় যে:
(ক) ইহা ভাগ্য রজনী ও ভাগ্য পরিবর্তনের
রাত।
(খ) ইহা সাধারণ ক্ষমার রাত্রি।
(গ) এ রাতে কুরআন কারীম নাজিল
হয়েছে।
(ঘ) এ রাতে বয়স ও রিজিক বৃদ্ধি করা হয়।
(ঙ) এ রাতে হায়াত ও মউত লেখা হয়।
(চ) এ রাতে সমস- রুহগুলো জমিনে নেমে
আসে।
(ছ) এ দিনে ওহুদের যুদ্ধে কাফেররা
নবী [সা:]-এর দাঁত মোবারক ভেঙ্গে
দেয়।
(জ) বিবিধ।
৩. শবে বরাতে যা করা হয়?
(ক) সরকারী ছুটি ঘোষণা ও বিভিন্ন
মিডিয়াতে বহুল প্রচার ও প্রসার।
(খ) সরকারী ও বেসরকারীভাবে
বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভা
এবং অনুষ্ঠান করা।
(গ) গোসল করা ও নতুন পোশাক ও আতর
ব্যবহার করা।
(ঘ) সারা রাত ধরে একশ রাকাত
সালাত আদায় ও দিনভরে রোজা
রাখা।
(ঙ) হালুয়া, রুটি, মাংস পাকানো।
(চ) আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানো ও
আলোকসজ্জা করা।
(ছ) পটকা ফুটানো।
(জ) কবর জিয়ারত করা।
(ঝ) স্বামীর সাথে রুহানী সাক্ষাতের
আশায় বিধবাদের সারা রাত বসে
অপেক্ষা করা।
(ঞ) মৃতদের জন্য দান-খয়রাত ও মোল্লা
ভাড়া করে দোয়া করানো।
(ট) গত এক বছরের মৃতদের পূর্বের মৃত্যু
আত্মার সাথে রুহ মিলানো অনুষ্ঠান
করা।
৪. এ সবের ভিত্তি কী?
এ সবরে পেছনে কাজ করে ধর্মীয়
অনুভূতি, বাতিল আকীদা, জাল ও দুর্বল
হাদীস, মিথ্যা কেসসা-কহেনী এবং
এক শ্রেণীর মোল্লাদের ধর্মের নামে
পেট-পকেটের ব্যবসা। এ ছাড়া রয়েছে
মতলববাজদের কুরআন ও সহীহ হাদীসের
ইচ্ছামত অপব্যাখ্যা।
৫. শবে বরাত পালনের পক্ষে দলিল ও
তার খণ্ডন:
প্রথমত: শবে বরাতের রাত ও দিনের জন্য
বিশেষ এবাদত নির্দিষ্ট করে তারা
বেশ কিছু হাদীস উল্লেখ করে থাকে।
এ সবই জাল অথবা অতি দুর্বল। যেমন:
১. আলী [রা:] থেকে বর্ণিত। যখন ১৫
শবা‘না হয় তখন তোমরা সে রাতের
কিয়াম কর ও দিনের রোজা রাখ।
নিশ্চয় আল্লাহ তা‘য়ালা এ রাতে
দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। অত:পর
বলেন: কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ
যাকে আমি ক্ষমা করে দেব। কেউ আছ
রিজিক তালাশকারী যাকে আমি
রিজিক দান করব। কেউ আছ অসুস' যাকে
সুস'তা দিব। কেউ এমন আছ, কেউ এমন
আছ----। এভাবে সারা রাত ফজর পর্যন-।
[হাদীসটি জাল তাখরীজুল
এহইয়া:১/৫৮২, আল-ইলালুল
মুতানাহিয়া:২/৯২৩, মীজানুল
ই‘তিদাল: ৪/৫০৪, য‘য়ীফ ইবনে মাজাহ:
হা:১৩৮৮, স'ায়ী ফতোয়া বোর্ড:৩/৪২]
২. যে ব্যক্তি ঈদের দুই রাত এবং ১৫
শা‘বানের রাত জাগবে, যে দিন সবার
অন-র মরে যাবে সে দিন তার অন-র
মরবে না। [হাদীসটি মুনকার মুরসাল,
মীজানুল ই‘তিদাল: ৩/৩৮০, কামেল:
৩/৯৯০২, আল-ইসাবাহ: ৩/২৯৭, উসদুল
গাবাহ: ৪/২৩৫]
৩. যে ব্যক্তি ৫টি রাত জাগবে তার
জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।
রাতগুলো হলো: ৮ জিল হজ্বের
তারবীয়ার রাত, আরাফাতের রাত,
ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতিরের রাত ও ১৫
শাবানের রাত। [হাদীসটি জাল,
আত্তারগীব: ২/১৩১৫, সিলসিলা
য‘য়ীফা:২/৫২২, স'ায়ী ফতোয়া
বোর্ড:৩/৪২]
৪. ৫টি রাতে কোন দোয়া ফেরৎ দেয়া
হয় না। রাতগুলো হচ্ছে: রজব মাসের প্রথম
রাত, শা‘বানের ১৫ তারিখের রাত,
জুমার দিনের রাত এবং ঈদুল ফিতির ও
ঈদুল আজহার রাত। [হাদীসটি জাল,
ফিরদাউসুল আখবার:২/২৭৯৭, আল-
আরায়িশ: পৃ: ৮৪. সিলসিলা
য‘য়ীফা:৩/১৪৫২, লাইলাতুন নিসফি মিন
শা‘বান ওয়াফাযলুহা: পৃ:৮৩,
ফাযায়িলুল আওক্ব-ত: পৃ:১৫০]
৫. যখন ১৫ শা‘বানের রাত হয় তখন একজন
আহবানকারী ডাকতে থাকে। কেউ
ক্ষমা প্রার্থী আছ আমি তাকে ক্ষমা
করে দেব? কেউ যাচনাকারী আছ
যাকে আমি দান করব? যে কেউ যা কিছু
এ রাতে আল্লাহর নিকট চাইবে তিনি
তাকে তা দেবেন। কিন' যে
ব্যভিচারিণী তার লজ্জাস'ান দ্বারা
জেনা করে এবং মুশরিক ব্যতিত।
[হাদীসটি দুর্বল, লাইলাতুন নিসফি মিন
শা‘বান ওয়াফাযলুহা: পৃ:৬৬, শু‘য়াাবুল
ঈমান:৭/৩৫৫৯, আল-মাওযু‘আতুল
কুবরা:২/১৩০, তানজিহুশ শারী‘য়া:২/৯৩.
আল-লালিল মাসনু‘য়া:২/৬০]
৬. আলী [রা:] থেকে বর্ণিত। শা‘বান
মাসের ১৫ তারিখের রাতে ১০০
রাকাতের সালাত। যার প্রতি
রাকাতে ১০বার করে সূরা এখলাস পাঠ
করতে হবে। আর অন্য এক বর্ণনায় ১২
রাকাত সালাত। [হাদীস দুইটি জাল,
আল-মানারুল মুনীফ: পৃ:৯৮-৯৯, আল-
লালিল মাসনু‘য়া:২/৫৭, আল-আছারুল
মারফু‘য়াহ: পৃ:৩২১, হিদায়াতুল হায়রান:
পৃ:১৭-১৮]
৭. আয়েশা [রা:] হতে বর্ণিত। তিনি
রসূলুল্লাহ [সা:]কে ১৫ শা‘বানের
রাত্রিতে বিছানায় না পেয়ে
তালাশ করার উদ্দেশ্যে বের হন। অত:পর
তাঁকে মদীনার কবরস'ানে জিয়ারত
অবস'ায় দেখেন।----এরপর তিনি [সা:]
ফিরে এসে আমার চাদরের ভিতরে
প্রবেশ করেন। এ সময় আমাল বড় বড় শ্বাস
পড়তে ছিল। অত:পর তিনি [সা:] বললেন:
হুমাইরা কেন বড় বড় নি:শ্বাস?------ এরপর
নবী [সা:] বললেন: এ কোন রাত তুমি
জান কী? এ রাতে আল্লাহ শেষ
আসমানে নেমে আসেন এবং বনি
কালবের ছাগল-ভেড়ার চুল ও পশম
পরিমাণ মানুষকে ক্ষমা করে দেন।
[হাদীসটি অতি দুর্বল, আল-‘ইলালুল
মুতানাহিয়া: প্র: ৬৮, য‘য়ীফুত
তিরমিযী: হা: ১১৯, য‘য়ীফুল জামে‘ হা:
১৭৬১, হিদায়াতুল হায়রান: পৃ:১৯-২০, আর
কিতাবু ইলমিল মানশুর এর লেখক বলেন:
আয়েশা [রা:] থেকে বর্ণিত এ
হাদীসটি জাল: পৃ:১৪৩-১৪৪ দ্র:]
আর পূর্বে উল্লেখিত আবু ছা‘লাবা ও
মু‘য়ায [রা:] হতে বর্ণিত সহীহ হাদীসদ্বয়
দ্বারা ১৫ শা‘বানের ফজিলত
প্রমাণিত সাব্যস- হলেও কোন বিশেষ
আমল সুসাব্যস- হয়নি। তাই নিজেদের
পক্ষ থেকে কোন এবাদত করা হবে
বিদাত যা শরিয়তে সম্পূর্ণভাবে
নিষিদ্ধ এবং ভ্রষ্টতার কাজ। নবী [সা:]
বলেন:
(ক) তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন কিছু
আবিস্কার করা থেকে দূরে থাক। কারণ
দ্বীনের ভিতরে প্রতিটি নতুন
আবিস্কার বিদাত। আর প্রতিটি
বিদাত হলো ভ্রষ্টতা এবং প্রতিটি
ভ্রষ্টতার পরিণাম হলো জাহান্নাম।
[আবু দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও
আহমাদ]
(খ) যে আমাদের দ্বীনের মাঝে নতুন
কিছু আবিস্কার করে যা তার অন-র্ভুক্ত
না, তা পরিত্যাজ্য।” [বুখারী ও মুসলিম]
(গ) যে কেউ যে কোন আমল করবে যা
আমাদের দ্বীনের অন-র্ভুক্ত নয়, তা
অগ্রহণযোগ্য। [মুসলিম]
সময়ের ফজিলত ও আমলের ক্ষেত্রে তা
৩ প্রকার:
এ ছাড়া আরো মনে রাখতে হবে যে,
কোন সময়ের বিশেষ ফজিলত ও তাতে
আমল করা না করা নিয়ে তা তিন
প্রকার। যেমন:
(১) যে সময়ের বিশেষ ফজিলত ও আমল
সুসাব্যস-। যেমন লাইলাতুল কদরের
রাত্রি। এ রাত্রির বিশেষ ফজিলত ও
আমল সুসাব্যস-। নবী [সা:] তাঁর বাণী ও
কাজ দ্বারা উম্মতকে এর প্রতি
উৎসাহিত করেছেন।
(২) যে সময়ের বিশেষ ফজিলত প্রমাণিত
কিন' কোন নির্দিষ্ট কোন আমল সাব্যস-
না। যেমন ১৫ শা‘বানের রাত্রি। এ
রাতের নবী [সা:] বিশেষ ফজিলত
বর্ণনা করলেও কোন নির্দিষ্ট আমলের
জন্য না তাঁর বাণী বা আমল দ্বারা এর
প্রতি উৎসাহিত করেছেন। বরং এ
রাত্রিতে শিরক ও হিংসা-বিদ্বেষ
মুক্ত মুমিন-মুসলিমদেরকে আল্লাহ ক্ষমা
করে দিবেন বলে জানিয়ে
দিয়েছেন। বরং জুমার দিনের ফজিলত
সুসাব্যস- হওয়ার পরেও নবী [সা:] সে
দিনকে নির্দিষ্ট করে রাতে কিয়াম ও
দিনে রোজা রাখতে নিষেধ
করেছেন। অতএব, এ রাতে বা দিনে
কোন বিশেষ এবাদত নির্দিষ্ট করা জঘন্য
বিদাত। [আত্তাহযীর মিনাল বিদা‘-
শাইখ বিন বাজ: পৃ:১৫-১৬ দ্র:]
অতএব, মনে রাখতে হবে যে, শিরক হলো
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের
কারণ এবং হিংসা-বিদ্বেষ হলো
মানুষের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কারণ। এ
দুইটি ত্যাগ করতে পারলেই এ রাতে
নাজাত ও মুক্তির আশা করা যায়। এ
ছাড়া বিদাত দ্বারা আল্লাহ ও
মানুষের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করা ব্যতিত
অন্য কিছু হয় না।
(৩) যে সময়ের বিশেষ কোন ফজিলত
এবং নির্দিষ্ট কোন আমলও সাব্যস- না।
যেমন মে‘রাজের রাত্রি। নবী [সা:] এ
রাত্রের কোন ফজিলত বর্ণনা করেননি
এবং কোন আমলও তাঁর বাণী বা কাজ
দ্বারা উম্মতকে উৎসাহি করেননি।
এ ছাড়া মধ্য শা‘বানে রোজা রাখার
পক্ষে একটি সহীহ হাদীসও তারা
বর্ণনা করে থাকেন। সেটি হলো:
ইমরান ইবনে হুসাইন [রা:] থেকে বর্ণিত,
নবী [সা:] তাকে বা অন্য এক ব্যক্তিকে
বলেন:তুমি কি সারারে শা‘বানের
রোজা রেখেছ? সে [রা:] বলল, না।
তিনি [সা:] বললেন:“যখন তুমি
(রমজানের) রোজা শেষ করবে তখন দুইটি
রোজা রাখবে। [বুখারী মু‘য়াল্লাক:৭/
১০২, মুসলিম: ৪/১৮১হা: ১৯৭৯] অন্য বর্ণনায়
আছে:সে স'লে দুইটি রোজা রাখবে।
[মুসলিম: হা: ১৯৮০]
এ হাদীসে সারার শব্দটি সুরার ও
সিরারও পড়া যায়। সারার শব্দটির ইমাম
আওজা‘য়ী, আবু উবাইদ এবং ভাষাবিদ,
হাদীসবিদ ও অপ্রসিদ্ধ শব্দবিদগণের
অধিকাংশ উলামারা অর্থ করেছেন
মাসের শেষাংস। তবে কিছু
আলেমদের মতে এর অর্থ মাসের প্রথম বা
মধ্যাংশ। সারার শব্দটি ‘ইসি-সরার’ শব্দ
থেকে ব্যুৎপত্তি যার অর্থ গোপন হওয়া।
মাসের শেষে চাঁদ গোপন থাকে বলে
এ সময়টিকে সারার বলে।
এ সাহাবীর মাসের শেষে দুইটি
রোজা রাখা অভ্যাস ছিল। কিন' যখন
তিনি রমজানের পূর্বে দুই একটি রোজা
রাখা নিষেধ শুনেছেন তখন তা ছেড়ে
দিয়ে ছিলেন। তাই নবী [সা:] যখন
জানতে পারলেন যে সে নিয়মিত
রাখত তখন তাকে সেটি শাওয়াল
মাসে কাজা করার নির্দেশ করেন। আর
নিষেধ ঐ ব্যক্তির জন্য যে রামজানকে
স্বাগত জানানোর জন্য এক দুইটা রাখে।
[শারহুন নববী ‘আলা মুসলিম: ৪/১৮১,
ফাতহুলবারী-ইবনে হাজার
আসকালানী: ৬/২৬০]
এ ছাড়া হাদীসে দুইটি রোজার কথা
উল্লেখ হয়েছে। তাই একে আইয়ামে
বীয তথা ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ অথবা
শুধুমাত্র ১৫ শা‘বানের রোজা রাখার
পক্ষে প্রমাণ গ্রহণ করা হাদীস সম্মত নয়।
দ্বিতীয়ত: কিছু তাবে‘য়ীদের আমল
দ্বারা এর পক্ষে দলিল গ্রহণ করে থাকে
তারা। যেমন: শামের খালেদ ইবনে
মা‘দান, মাকহূল ও লোকমান ইবনে
‘আমের (রহ:)-এর আমল। এ ছাড়া কিছু
ইসরাঈলী বর্ণনা দ্বারাও তারা
দালিল গ্রহণ করে থাকে।
এর কয়েকভাবে খণ্ডন:
১. ইসরাঈলী বর্ণনা আবার কবে হতে
শরিয়তের মানদণ্ড হলো? ইহা তো
শরিয়তে একেবারেই ভিত্তিহীন। আর
বিশেষ করে বিপরীত হলে যা এখানে
প্রযোজ্য।
২. আর তাবে‘য়ীদের আমলও কখন থেকে
শরিয়তের দলিল হলো? এতো হলো যখন
শরিয়তের পরিপন'ী না হবে। আর যদি
বিপরীত হয় তবে তার অবস'া কি
দাঁড়াই? সাহাবীর কথা দলিল হওয়া
না হওয়া নিয়ে আহলে উসুল মতনৈক্য
করেছেন। আর তাবে‘য়ীদের ইজমা‘
ছাড়া কারো একক মত দলিল না এ
ব্যাপারে তো কোন দ্বিমতই নেই। আর
সাহাবীর কথা বা কাজ যদি তাঁর
বর্ণনার বিপরীত হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য
নয়। ইহা অধিকাংশ ইমামদের মতামত।
৩. সে সময় শামের ঐ সব তাবে‘য়ীদের
আমলের প্রতিবাদ করেছেন অধিকাংশ
ওলামা কেরাম। যেমন: আতা, ইবনে
আবি মুলাইকাহ, ইমাম মালেকের
সাথীগণ। বরং হেজাজের অধিকাংশ
তাবে‘য়ীগণ। তাঁরা ওদের কাজকে
বিদাত গণনা করেছেন। আর তাঁরাই
হলেন হারামাই শারীফাইনের
অধিবাসী ও অহির অবতরণক্ষেত্র ও
শরিয়ত নাজিলের স'ানের মানুষ। এ
ছাড়া তাঁরা হলেন শরিয়ত সম্পর্কে
আহলে শামের চাইতে অধিক জ্ঞানী
ও সংখ্যায়ও বেশি। আর ইহা আহলে
মাদীনার বিপরীত আমলও বটে।
৪. এ ছাড়া সালাফে সালেহীনের
অধিকাংশ যাকে বিদাত গণনা
করেছেন তাকে কিছু সংখ্যক মানুষের
আমলের উপর ভিত্তি করে জায়েজ মনে
করা সঠিক নয়। আর এ ছিল তাদের পক্ষ
থেকে এক প্রকার ইজতিহাদ। তাই ভুল
হলেও তাদের একটি সওয়াব রয়েছে।
কিন' যারা নিজেদের ব্যক্তি সার্থের
জন্য তাদের ভুলের অনুসরণ করবে তাদের
জন্য রয়েছে পাপ এতে কোন দ্বিমত
নেই। অতএব, শবে বরাতের রাত জাগা
পরিত্যাজ্য। নবী [সা:] বলেন:যে কেউ
যে কোন আমল আমাদের দ্বীনের মাঝে
করবে যার নির্দেশ নেই তা
অগ্রহণযোগ্য। এই বর্ণনার পরেও কি
তাদের কোন হুজ্জত-দলিল বাকি রইল।
সুতরাং,সর্বপ্রকার কল্যাণ রয়েছে নবী
[সা:]-এর হেদায়েত ও তাঁর সাহাবা
কেরামে [রা:]-এর হেদায়েতের মধ্যে।
৫. ইমাম মাকদেসী (রহ:) বলেন:
শা‘বানের ১৫ তারিখে সালাত
আদায়ের বিদাতটি সর্বপ্রথম চালু করে
ইবনে আবিল হামরা ৪৪৮ হিজরিতে।
সে নাবলুস শহর থেকে এসে বায়তুল
মাকদিসে সালাত আদায় করা শুরু করে।
তার মিষ্টি সুরে কুরআন তেলাওয়াতে
সাধারণ মানুষরা আকৃষ্ট হয়ে তার
সাথে শরিক হয় সালাতে। ইবনুল
আরাবী (রহ:) তাঁর গ্রন' আরিযাতুল
আহকামে বলেন: শা‘বানের ১৫
তালিখের ফজিলতে কোন হাদীস
মিলে না যার প্রতি ভরসা করা চলে।
আর গাজ্জালীর এহইয়াউল উলুম ও ইবনে
আরাবী সূফীর কিতাব কুতূলকুলূব এ বর্ণিত
হাদীস দ্বারা কেউ যেন ধোঁকায় না
পড়ে। হাফেয ইরাকী (রহ:) বলেন:
অর্ধেক শা‘বানের বর্ণিত হাদীস জাল।
ইমাম নববী তাঁর কিতাব আল-মাজমূ‘তে
বলেন: ১৫ শা‘বানে ১০০ রাকাত ও
রজবের প্রথম জুমাতে মাগরিব ও এশার
মাঝে ১২ রাকাতের সালাত ভ্রষ্ট
বিদাত। আর গাজ্জালীর এহইয়াউল উলুম
ও ইবনে আরাবী সূফীর কিতাব কুতুলকুলূব-
এর দ্বারা কেউ যেন ধোঁকায় না পড়ে।
তৃতীয়ত: শবে বরাতকে কুরআন নাজিল ও
ভাগ্য রজনী এবং এ রাতে সমস- রুহ
জমিনে অবতরণ করে ধারণা করা সবই
মিথ্যা।
এর পক্ষে যে সব দলিল গ্রহণ করে তা
নিম্নরূপ:
১. আল্লাহর বাণী: আমি একে নাজিল
করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয় আমি
সকতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক
প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় সি'রকৃত হয়। [সূরা
দুখান:৩-৪]
তাদের ধারণা এ আয়াতে বর্ণিত
বরকতময় রাত শবে বরাত। আর এর জন্য
ইকরিমা হতে বর্ণিত দুর্বল বর্ণনাকে
হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে থাকে
যা সমস- সহীহ বর্ণনার বিপরীত। এ রাত
যে লাইলাতুল কদরের রাত সে
ব্যাপারে সকল প্রসিদ্ধ মুফাসসিরগণ
ঐক্যমত পোষণ করেছেন। [তাফসীর
তাবারী, কুরতুবী, ইবনে কাছীর
ইত্যাদি দ্র:]
এ ছাড়া যদি তর্কের খাতিরে
কিছুক্ষণের জন্য ধরে নেয়া যায় যে,
কুরআন শা‘বানের শবে বরতে নাজিল
হয়েছে, তবে কুরআন যে রমজানে (সূরা
বাকারা:১৮৫) লাইলাতুল কদরে (সূরাা
কদর) নাজিল হয়েছে এর সম্পূর্ণ বিপরীত
দাঁড়াই না কী? ইহা মেনে নিলে
কুরআনের মাঝে বৈপরীত্য সাব্যস- হয়
না কী? আর আল্লাহ বলেছেন: কুরআন
যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট
হতে আসত, তবে তার মাঝে পৈরীত্য
রইত। [সূরা নিসা:৮২]
এর উত্তরে ওরা বলে, কুরআন দুই
রাত্রিতে নাজিল হয়েছে, একবার
লাইলাতুল কদরে আর দ্বিতীয়বার শবে
বরাতে।
এমনটিই যদি হয় তাহলে নবী [সা:] যেমন
লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য এতেকাফ ও
এবাদত করেছেন সেরূপ শবে বরাতে
করেননি কেন?
এ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সবকিছুই মন
গড়া বাতিল অগ্রহণযোগ্য। তাই মতলব
হাসিলের জন্য দুর্বল বর্ণনা ও নিজস্ব
ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ দ্বারা কুরআনের
তাফসীর করা একটি বড় ধরণের অপরাধ।
২. উল্লেখিত সূরা দুখানের আয়াত ও
কিছু দুর্বল হাদীস দ্বারা শবে বরাত
ভাগ্য রজনী তারা প্রমাণ করার
অপচিষ্টা চালিয়ে থাকে।
দুর্বল হাদীস দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য
নয়। এ ছাড়া ভাগ্য রজনী তো রমজানের
শেষ দশকের বেজোড় রাতে রয়েছে।
তাই লাইলাতুল কদর মানে ভাগ্য রজনী
যা রমজানে ত্যাগ করে হুবহু আরবী
শব্দের ফার্সী শবে বরাত যা শা‘বানে
নাম দেয়া প্রমাণ করে ডাল মে কুচ
কালা হায়। আর শবে বরাতে ভাগ্য
লিখা হয় বা পরিবর্তন হয় ইত্যাদি
ধারণা বাতিল আকীদা। কারণ, আসমান
ও জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার পূর্বে ভাগ্য
লেখা হয়েছে। [মুসলিম] আর পূর্ণ এক
বছরের তফসিল যা ফেরেশতাদেরকে
দেওয়া হয় তা লাইলাতুল কদরে শবে
বরাতে নয়। এ ছাড়া শবে বরাতে নতুন
কাপড় পরে, ভাল খানাপিনা
পানাহার করে ও আতর মেখে কারো
ভাগ্য পরিবর্তন হয় ধারণা করা বাতিল
আকীদা। আর এর দ্বারা কারো পরিবর্তন
হতে দেখেছেন কী? আর যদি হত
তাহলে এ রাতের পর আর কেউ গরিব ও
অভাবী থাকত না?
৩. শবে বরাতে সমস- রুহগুলো জমিনে
নেমে আসার পক্ষে সূরা কদরের আয়াত
তানাজ্জালুল মালায়িকাতু ওয়াররুহ
কে তারা দলিল গ্রহণ করে।
নি:সন্দেহে ইহা অজ্ঞতা ও অপচেষ্টা
ছাড়া আর কিছুই না। কারণ, এখানে রুহ
অর্থ জিবরাঈল [আ:] যা সমস- তাফসীর
গ্রনে' লিপিবদ্ধ। আর রুহ একবচন যার অর্থ
একটি রুহ। তাই সকল রুহ অর্থ হলে রুহ-এর
বহুবচন আরওয়াহ্ হওয়া উচিত ছিল যা এ
আয়াতে নেই। এ ছাড়া রুহ জমিনে
নেমে আসে তা বাতিল আকীদা।
কারণ মুমিনদের রহুগুলো জান্নাতের
ইল্লি‘য়ীনে এবং অন্যান্যদের রুহগুলো
থাকে জাহান্নামের সিজ্জীনে
অবস'ান করে। আর পুনরুত্থান পর্যন- সবাই
বারযাখী জীবনে সেখানেই থাকবে।
[সূরা আল-মুমিনূন:১০০]
এ ছাড়া রুহগুলোকে স্বাগত জনানোর
জন্য আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালানো
এবং আলকসজ্জা ও পটকা ফুটানো সবই
অগ্নিপূজক ও হিন্দুদের দেয়ালী পূজার
সদৃশ। আর এ রাতে জটা ও ঘটা করে কবর
জিয়ারত করা বিদাতী কবর
জিয়ারতের অন-র্ভুক্ত এবং নবী [সা:]-
এর আমলের বিপরীত। কারণ তিনি
অধিক সংখ্যক একাকী কবর জিয়ারত
করতেন যা সহীহ হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত। [মুসলিম:৫/১০১ হা:১৬১৮] ।
ছাড়া এ রাতে কবর জিয়ারতের পক্ষে
আয়েশা [রা:] থেকে পূর্বে উল্লেখিত
হাদীস অতি দুর্বল। আর মেনে নিলেও
তা ছিল একাকী জটা ও ঘটা এবং
মোল্লা ভাড়া করে দল বেধে নয়।
চতুর্থত: নবী [সা:]-এর ওহুদের যুদ্ধে দাঁত
ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তিনি নরম খাদ্য
হিসেবে হালুয়া খেয়েছিলেন বলে
এ রাতে হালুয়া, রুটি ও মাংস খাওয়া
হয় ও মৃত রুহের মাগফেরাতের জন্য বিতরণ
করাও হয়।
সীরাতে রাসূলের গ্রন'সমূহে নবী
[সা:]-এর ওহুদের যুদ্ধ কখন ছিল? এ ছিল ৩য়
হিজরি সালের ১১ শাওয়াল রোজ
শনিবার সকালে। তাই একে শা‘বানের
১৫ তারিখে টেনে নিয়ে আসার মধ্যে
উদ্দেশ্য কী? এ ছাড়া দাঁত ভাঙ্গা
রোগীর জন্য হালুয়া উপযুক্ত খাদ্য হলেও
রুটি এবং এর সাথে মাংস কি উপযুক্ত?
আর সাহাবা কেরাম [রা:] নবীর যারা
দাঁত ভেঙ্গে ছিল তাদের দাঁত
ভেঙ্গেই ভালবাসা প্রমাণ করেছেন।
কিন' যারা হালুয়া এবং এর সাথে
মজার রুটি ও মাংস খেয়ে নবীর
ভালবাসা প্রকাশ করে তারা কে?
মোট কথা এ সব বলে দিচ্ছে যে, সবকিছুর
সম্পর্ক পেট ও পকেটের সাথে নবীর
ভালবাসার সাথে নয়। আর দিন
নির্দিষ্ট করে মৃতদের নামে দান-সদকা
করাও শরিয়ত সম্মত নয় বরং বিদাত। তাই
নবীর ভালবাসা ও মৃতদের নামে দান-
খয়রাত দ্বারা নিজেদের পেট-
পকেটের মতলব হাসিল করা ছাড়া অন্য
কোন উদ্দেশ্য আছে কী? মৃতদের কবরে
সওয়াব পৌঁছানোর নামে নিজেদের
পেটে হালুয়া, রুটি ও মাংস এবং
পকেটে টাকা পৌঁছানোর
ধান্দ্বাবাজি বন্ধ করেন দেখা যাবে
শবে বরাত বন্ধ হয় কি না?
পঞ্চমত: তাদের কিছু শংসয় ও তার খণ্ডন:
১. শংসয়: শবে বরাত বিষয়ে কোন সহীহ
হাদীস না থাকলেও অনেক দুর্বল
হাদীস তো আছে। আর ফজিলতে দুর্বল
হাদীসের আমল চলে।
খণ্ডন: দ্বীনের মাঝের সমস- এবাদত মওকুফ
তথা কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের উপর
নির্ভরশীল। তাই কোন বিশুদ্ধ বিশ্বস-
দলিল ছাড়া কোন আমল গ্রহণযোগ্য নয়।
আর ফজিলতেও দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য
না হলো সঠিত মত। কারণ, আল্লাহ ও
তাঁর রসূল এবং দ্বীন কী দুর্বল এবং অন্যে
মুখাপেক্ষী? না কক্ষনো না। এ ছাড়া
যারা ফজিলতে দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য
মত দিয়েছেন তারা এর জন্য বিশেষ শর্ত
করেছেন। যেমন:
(ক) এর মূল ভিত্তি কুরআন ও সহীহ হাদীস
দ্বারা হতে হবে।
(খ) এ যেন কোন আকীদা বা হালাল-
হারাম ও এবাদতের ক্ষেত্রে না হয়।
(গ) কঠিন দুর্বল যেন না হয়।
(ঘ) আমলের সময় নবীর সুন্নত মনে করে
আমল না করে।
(ঙ) জন সাধারণের সামনে যেন আমল না
করে।
(চ) এর আমল সব সময় যেন না করে।
আর শবে বরাত ও অন্যান্য বিদাতে
তারা এসব শর্তকে উপেক্ষা করে
ইচ্ছামত অতি দুর্বল ও জাল সবই তারা
চালিয়ে থাকে। আর নবীর সুন্নত মনে
করেই আমল করে থাকে।
২. শংসয়: বিদাত দুই প্রকার: বিদাত
হাসানাহ ও বিদাত সায়্যিয়াহ।
খণ্ডন: নবী [সা:] বলেছেন প্রতিটি
বিদাত ভ্রষ্ট আর ভ্রষ্টতার ঠিকানা
জাহান্নাম। আর তারা বলে, কিছু ভাল
বিদাত আছে এতো নবীর কথার সম্পূর্ণ
বিপরীত। যদি বলা হয়: প্রতিটি মানুষ
মরণশীল, তবে কি বলবেন কিছু মানুষ
মরণশীল নয় আর কিছু মরণশীল? যে সব
জিনিসকে তারা ভাল বিদাত বলছে,
হয়তো মূলত সেগুলো বিদাত নয়। যেমন:
দুনিয়ার আধুনিক যুগের বিভিন্ন ধরণের
মাধ্যম ও পদ্ধতি। অথবা সেগুলো
দ্বীনেরই অন-র্ভুক্ত কিন' তারা দ্বীনের
বাইরের নির্ধারণ করে বিদাত সাব্যস-
করে নব আবিস্কৃত বিদাতের পক্ষে
দলিল গ্রহণ করে। যেমন: রমজানে
রাত্রের নামাজ জামাত করে পড়া
নবী [সা:]-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত।
এরপর উমার [রা:] শুধুমাত্র নতুন করে তা
চালু করেন। এ ছাড়া বিদাতকে
দুইভাগে ভাগ করাটাও একটি বিদাত।
৩. শংসয়: বিদাত হলে কী এতো অধিক
মানুষ করত।
খণ্ডন: শরিয়তের বিধিবিধানের দলিল
অধিক সংখ্যা দ্বারা হয় না। বরং এর
জন্য প্রয়োজন কুরআন অথবা বিশুদ্ধ হাদীস।
আর সংখ্যা বেশি তো বাতিলের
আলামত এবং কম সংখ্যাই সত্যের লক্ষণ
যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
শবে বরাতকে কেন্দ্র করে যে সব
বিদাত ও বাতিল আকীদা:
১. শবে বরাতকে ভাগ্য রজনী মনে করা।
২. এ রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে
ধারণা করা।
৩. এ রাতে আল্লাহ সাধারণ ক্ষমা
করেন আকীদা পোষণ করা।
৪. এ রাতে বয়স ও রিজিক নির্ধারণ করা
হয় মনে করা।
৫. এ রাতে ভাগ্য পরিবর্তন হয় বিশ্বাস
করা।
৬. এ রাতকে লাইলাতুল কদরের সম
মানের এ আকীদা রাখা।
৭. এ রাতকে লাইলাতুল কদরের চাইতেও
বেশি প্রাধান্য দেওয়া।
৮. এ রাতে জটা-ঘটা করে কবর জিয়ারত
করা।
৯. এ রাতে নির্দিষ্ট করে মৃতদের নামে
বিশেষভাবে দান-খয়রাত করা।
১০. এ রাতে হালুয়া, রুটি ও মাসং
পাকানো।
১১. এ রাতে আগরবাতি, মোমবাতি
জ্বালানো এবং আলোকসজ্জা করা।
১২. এ রাতে গোসল করা এবং নতুন কাপড়
পরে সারারাত নামাজ পড়া।
১৩. এ রাতের দিনে রোজা রাখা।
১৪. এ রাতে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান
করা।
১৫. এ রাতে বিধবাদের স্বামীর প্রিয়
খানা পাকিয়ে তা সামনে করে
রাতভর রুহানী সাক্ষাতের আশায় বসে
বসে অপেক্ষা করা।
১৬. গত এক বছরে মৃত মানুষের রুহগুলোর
আগের রুহের সাথে মিলানো অনুষ্ঠান
করা।
১৭. এ রাতে সূরা দুখান পাঠকারীর জন্য
সারা দিন ৭০ হাজার ফেরেশতা
দোয়া করবে মনে করে তা পাঠ করা।
[জাল হাদীস]
১৮. এ রাতে সূরা ইয়াসীন তিনবার পাঠ
করা। প্রথমবার বয়স বৃদ্ধির জন্য,
দ্বিতীয়বার বালা-মসিবত দূর করার জন্য
এবং তৃতীয়বার কোন মানুষেরমুখাপেক্
ষীর না হওয়ার জন্য।
১৯. এ রাতে জমজমের পানি অন্যান্য
দিনের চেয়ে বৃদ্ধি পায় ধারণা করা।
২০. এ রাতে শিয়া-রাফেযীদের
মিথ্যা কল্পিত ইমাম মাহদীর জন্ম দিবস
পালন করা।
২১. বিবিধ।
শবে বরাতের মূল রহস্য দুইটি:
(এক) শিয়া-রাফেযীদের বাতিল
আকীদা যে, তাদের ১২তম ইমাম
মাহদীর জন্ম হয়েছে ১৫ শা‘বানে।
তিনি এখন আত্মগোপন করে আছেন।
তাদের কল্পিত ইমামের ১৫ শা‘বানে
জন্ম বলেই এ রাত নিয়ে এতো ওস-াদের
বাড়াবাড়ি এবং সূফী ছাত্রদের
ছড়াছড়ি। শিয়ারা এ রাতে তাদের
ইমামকে আহবানের উদ্দেশ্যে পত্র
লেখে তা সাগরে, নদীতে, কূপে,
জঙ্গলে, গুহাতে ও মরুভূমিতে নিক্ষেপ
করে থাকে। আর বলে: আমাতের প্রতি
সুন্নী মুসলমানরা জুলুম করছে আপনি
তাড়াতাড়ি বের হয়ে তার প্রতিশোধ
গ্রহণ করুন এবং আমাদেরকে মুক্তি করুন---।
(দুই) পেট ও পকেটের ধান্দ্ববাজদের
ধর্মের নামে জমজমাট ব্যবসা। যে
ব্যবসায় লাগে না কোন পুঁজি, লাগে
না লাইসেন্স। আর নাই কোন
চাঁদাবাজদর চাঁদাবাজি এবং নাই
কোন নোকসান শুধু লাভ আর লাভ। ইহা
বন্ধ করে দেন সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদেরকে কিছু বলতে হবে না বরং
তারাই বন্ধ করে দেবে বলে আমাদের
বিশ্বাস।