রাসূল সা:এর মেরাজ
( ঊর্ধ্বালোকে গমন)
এবং আধুনিক বিজ্ঞান :
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর দীর্ঘ ১২টি
বছর কুরাইশদের বাধাবিপত্তির
মোকাবেলায় মহান আল্লাহর
বিধান প্রচার-প্রসার ও
স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার ল্েয
যখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছলেন,
যখন চার দিকে অসত্যের
ধারকবাহকেরা হিংস্রতার চরম
আঘাত হানতে প্রস্তুত,
সাহায্যকারী মানুষের মধ্য
থেকে প্রাণপ্রিয় সঙ্গিনী হজরত
খাদিজা রা: ও চাচা আবু
তালিব লোকান্তরিত, অসত্যের
কোপানলে মক্কাভূমি উত্তপ্ত, মা
হালিমা রা:-এর স্নেহভূমি
তায়িফ থেকে নিদারুণ আশাহত
হয়ে ফিরে এসে মানসিক দিক
দিয়ে চরম বিপর্যস্ত- এমনই এক
সঙ্কটকালে অবিলম্বে ইসলামি
সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে
কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের বুকে
আগত সব মানুষের ওপর মহান
আল্লাহর বিধানাবলি কার্যকর
করার বাস্তবধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ
করার উদ্দেশ্যে সর্বোপরি সময় ও
কালের ঊর্ধ্বে উঠে সব সৃষ্ট বস্তু ও
তার প্রতিক্রিয়াকে উপলব্ধি,
সৃষ্টি জগতের গোপন রহস্য
অবলোকন ও মনোবল দৃঢ় করার
নিমিত্ত মহান আল্লাহর একান্ত
সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশায়
মহানবী সা: মদিনায় হিজরতের
এক বছর পূর্বে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের
রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত
রাতে সশরীরে মেরাজের
মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত
সান্নিধ্য লাভে ধন্য
হয়েছিলেন। জাগতিক হিসাবে
মহানবী সা: মেরাজে ২৭ বছরে
সমপরিমাণ সময় ব্যয় করেছিলেন।
প্রত্যেক নবী-রাসূলের জীবনেই
কিছু না কিছু মুজিজা বা
অলৌকিক ঘটনা থাকে। মহানবী
সা:-এর মুজিজাসমূহের মধ্যে
মেরাজ অন্যতম। এটি এমনই একটি
ঘটনা, যার সাথে রয়েছে
ঈমানের গভীরতম সম্পর্ক। কাজেই
মেরাজের বৈজ্ঞানিক যুক্তি
খুঁজতে যাওয়া একটি অবান্তর
চিন্তা। বলা বাহুল্য, যুক্তি
কোনো দিনই ঈমানের ভিত্তি
নয়, ঈমানই হচ্ছে যুক্তির ভিত্তি।
বরং যুক্তির মতা যেখানে শেষ
ঈমানের যাত্রা সেখান থেকেই
শুরু। তার পরও কোনো কোনো মহৎ
ব্যক্তির এ ব্যাপারে যুক্তির
অবতারণা সেটা শুধু ঈমানের
স্বাদ অনুভব করার জন্যই।
বিজ্ঞানের এ চরম উৎকর্ষের যুগে
আমরাও তাই মেরাজকে
বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ
করে দেখতে চাই।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সশরীরে
মেরাজের সত্যতা যাচাই করতে
গিয়ে আমরা নিম্নোক্ত
প্রশ্নগুলোর সমাধান দেয়ার
চেষ্টা করব।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির
বেড়াজাল কিভাবে ছিন্ন করা
সম্ভব?
সময়সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যের
ব্যাখ্যা কী?
পূর্ববর্তী নবীগণের সাথে সাাৎ
কী করে হলো?
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি :
মহানবী সা:-এর সশরীরে
মেরাজের বিরুদ্ধে
বিরুদ্ধবাদীদের প্রধান যুক্তি
হলো জড় জগতের নিগড়ে আবদ্ধ
স্থূলদেহী মানুষ কিভাবে
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে
আকাশলোকে বিচরণ করে? তা
ছাড়া পৃথিবীর আকর্ষণ শক্তি
যেখানে শূন্যে অবস্থিত স্থূল
বস্তুকে মাটির দিকে টেনে
নামায়, সেখানে কী করে
মহানবী সা: সশরীরে মেরাজে
গমন করেন?
গতিবিজ্ঞান (Dynamics),
মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব (Law of Gravity)
এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের (Law of
Relativity) সর্বশেষ বিশ্লেষণ ও
পর্যালোচনার আলোকে
মেরাজের ঘটনাকে বিচার
করলে এর সম্ভাব্যতা সহজেই
আমাদের কাছে বোধগম্য হয়ে
ওঠে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ
পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস
করতে পারেননি যে, মাধ্যাকর্ষণ
শক্তিকে ভেদ করা সম্ভব। যেমন
স্যার আইজাক নিউটনের সূত্র
অনুসারে, ‘law of motion and the idea of
universal gravitation বা মাধ্যাকর্ষণ
নীতি যা ডিঙানো অসম্ভব।
কিন্তু সত্তরের দশকের
বিজ্ঞানীরা চাঁদে পৌঁছার
মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে,
মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ডিঙানো
সম্ভব। এ সম্পর্কে আধুনিক
বৈজ্ঞানিক Arther G Clark তাঁর
‘The exploration of space’ গ্রন্থে
বলেছেন, 'As the distance from the
earth lengthens in to the thousand of miles
the reduction (of Gravity) becomes
substantial twelve thousand miles up, an
one-pound weight would weight only an
one ounce. It follows, therefore, that further
away one goes from the Earth. The easier
it is to go onwards'.
তিনি অন্যত্র বলেছেন, 'Gravity y
steadily weakens as we go up words away
from Earth, until at very great distances it
becomes completely negligible'.
এভাবে আকর্ষণ ক্ষমতা যখন
মোটেই বোঝা যায় না, সে
অবস্থাকে Zero Gravity বলা হয়।
গতিবিজ্ঞানীরা আরো
জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ২৫ হাজার
মাইল বেগে ঊর্ধ্বালোকে ছুটতে
পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে
মুক্তি লাভ সম্ভব। এ
গতিমাত্রাকে তারা মুক্তিগতি
(Escape velocity) নামে আখ্যায়িত
করেন।
আমরা জানি, মহানবী সা:
‘বুরাক’ নামক এক অলৌকিক
বাহনের ওপর বসে ঊর্ধ্বালোকে
গমন করেছিলেন। আরবি শব্দ
‘বারকুন’ অর্থ বিদ্যুৎ। বুরাক বলতে
মূলত বিদ্যুৎ থেকে অধিক
গতিসম্পন্ন বাহনকে বোঝায়।
অতএব দেখা যাচ্ছে, মাধ্যাকর্ষণ
যুক্তি দ্বারা মেরাজের
সম্ভাবনাকে নিবারিত করা
যাচ্ছে না।
সময়সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যের
ব্যাখ্যা : আপেক্ষিক তত্ত্বের
প্রবক্তারা বলছেন, সময়ের
স্থিরতা বলতে কিছুই নেই, ওটা
আমাদের মনের খেয়াল মাত্র।
বস্তুত সময় সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান
ও ধারণা আপেক্ষিক। সময়ের প্রভাব
সবার ওপর সমান নয় বলেই
আইনস্টাইন বলেছেন, 'There is no
standard time, all time is local'. দর্শকের
গতির তারতম্যে বস্তু বা ঘটনার
স্থান নির্ণয়ে তারতম্য ঘটে।
আবার একই সময়ে বিভিন্ন
স্থানে সঙ্ঘটিত দু’টি ঘটনা
দর্শকের গতির তারতম্যে বিভিন্ন
সময়ে সঙ্ঘটিত হচ্ছে বলে মনে হয়।
গতির মধ্যে সময়
অস্বাভাবিকভাবে খাটো হয়ে
যায়। সময় সম্বন্ধে আমাদের
ধারণার এই আপেক্ষিকতা গতি
সম্বন্ধীয় স্বতঃসিদ্ধের ওপর
আপতিত হলে যে ফলাফল দাঁড়ায়
তা হলো স্থান ও কাল সম্পর্কে
আমাদের উপলব্ধিটা একটা
গোলক ধাঁধার মধ্যে আপতিত বলে
মনে হতে পারে; কিন্তু প্রকৃত
অবস্থা তা নয়। আলোক
বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে
এটা আজ সবার জানা যে,
আলোকরশ্মি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০
মাইল অতিক্রম করে। আলোর গতিই
সর্বোচ্চ- এ ধারণাও ইদানীং
আবার ধ্রুব সত্য হিসেবে স্বীকৃত
নয়। Herold Leland Goodwin Zvi Space
Travel গ্রন্থে বলেছেন, ‘আলোর
গতি অপো মনের গতি ঢের
বেশি।’ যা হোক, আলোর গতির
সাথে কোনো বস্তুর গতির
সামঞ্জস্যের তারতম্যই (Degree of
Dispersion) সময়ের তারতম্য ঘটার
অন্যতম কারণ।
ওপরের বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলোর
আলোকে মেরাজের ঘটনা
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,
বোরাক আরোহী মহানবী সা:-এর
গতির মাত্রা এত বেশি ছিল যে,
সব ঘটনাই পৃথিবীর দর্শকের কাছে
কয়েক মুহূর্তের ঘটনা বলে মনে
হলেও কালের প্রবাহে তা ছিল
দীর্ঘ সময়।
পূর্ববর্তী নবীগণের সাথে
সাক্ষাৎ : মহান আল্লাহর সৃষ্টি এই
মহাবিশ্ব মূলত আলোর সমুদ্র ও
আলোর মেলা। গোটা সৃষ্টিলোক
আলো আর আলোতে তরঙ্গায়িত।
আলোর গতি ও প্রকৃতি হলো
বক্রাকার এবং থেকে থেকে
আসা। আর বৃত্তাকার বা থেমে
থেমে আসার কারণে এর মধ্যে
ধরা পড়ে সম্মুখের ঘটমান দৃশ্যপটের
চিত্র। এভাবে সৃষ্টির মাঝে
যাবতীয় ক্রিয়াকর্মের রেকর্ড
সচিত্র সংরক্ষিত হয়ে থাকে।
আলোর গতির সমপরিমাণ
গতিতেই মহাবিশ্বের অতীত
দিনের সব ঘটনা ও ক্রিয়াকাণ্ড
সংরক্ষিত হয়ে আছে। যদি কোনো
ব্যক্তি বা সত্তা আলোর গতির
চেয়ে দ্রুত গতিতে মহাবিশ্বের
প্রান্তরের দিকে ছুটে যায়
তাহলে সে ঘটনা প্রবাহের
বিভিন্ন স্তর অতিক্রমকালে
অতীতের সব ঘটনাই সে ঘটমান
অবস্থায় জীবন্ত দেখতে পাবে।
এভাবেই তিনি যখন আলোর
সর্বোচ্চ গতিতে চলতে ছিলেন,
তখন হজরত ঈসা, মুসা, ইব্রাহিম,
আদম আ: ও অন্যান্য অতীত ঘটনা
তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাই
নবী ও রাসূলদের সাথে বিশ্বনবী
সা:-এর সাক্ষাৎ মোটেই অবাস্তব ও
অবৈজ্ঞানিক নয়। মূলত তা ছিল
স্বাভাবিক ব্যাপার।
শেষ কথা : মেরাজের ঘটনাবলি
আমাদের চিন্তা ও কল্পনাকে
ঊর্ধ্বমুখী করে। বিজ্ঞানের
নভোচারিতায় অভূতপূর্ব সাফল্য
তার বাস্তব প্রমাণ। বস্তুত যেদিক
দিয়েই দেখি না কেন, মেরাজ
সত্যিই এক অপূর্ব ঘটনা। এ সম্বন্ধে
চিন্তা করলেও হৃদয় পবিত্র হয়,
মনের দিকচক্রবাল সম্প্রসারিত
হয়ে যায়। মূলত মেরাজ
মানবজাতির জন্য সামাজিক,
বৈজ্ঞানিক, আধ্যাত্মিক- এক
কথায় ইহলৌকিক ও পারলৌকিক
মঙ্গল সাধন করেছে।
সূত্র:দৈনিক নয়া দিগন্ত
( ঊর্ধ্বালোকে গমন)
এবং আধুনিক বিজ্ঞান :
মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর দীর্ঘ ১২টি
বছর কুরাইশদের বাধাবিপত্তির
মোকাবেলায় মহান আল্লাহর
বিধান প্রচার-প্রসার ও
স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার ল্েয
যখন এমন একপর্যায়ে পৌঁছলেন,
যখন চার দিকে অসত্যের
ধারকবাহকেরা হিংস্রতার চরম
আঘাত হানতে প্রস্তুত,
সাহায্যকারী মানুষের মধ্য
থেকে প্রাণপ্রিয় সঙ্গিনী হজরত
খাদিজা রা: ও চাচা আবু
তালিব লোকান্তরিত, অসত্যের
কোপানলে মক্কাভূমি উত্তপ্ত, মা
হালিমা রা:-এর স্নেহভূমি
তায়িফ থেকে নিদারুণ আশাহত
হয়ে ফিরে এসে মানসিক দিক
দিয়ে চরম বিপর্যস্ত- এমনই এক
সঙ্কটকালে অবিলম্বে ইসলামি
সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে
কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের বুকে
আগত সব মানুষের ওপর মহান
আল্লাহর বিধানাবলি কার্যকর
করার বাস্তবধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ
করার উদ্দেশ্যে সর্বোপরি সময় ও
কালের ঊর্ধ্বে উঠে সব সৃষ্ট বস্তু ও
তার প্রতিক্রিয়াকে উপলব্ধি,
সৃষ্টি জগতের গোপন রহস্য
অবলোকন ও মনোবল দৃঢ় করার
নিমিত্ত মহান আল্লাহর একান্ত
সান্নিধ্য লাভের প্রত্যাশায়
মহানবী সা: মদিনায় হিজরতের
এক বছর পূর্বে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের
রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত
রাতে সশরীরে মেরাজের
মাধ্যমে মহান আল্লাহর একান্ত
সান্নিধ্য লাভে ধন্য
হয়েছিলেন। জাগতিক হিসাবে
মহানবী সা: মেরাজে ২৭ বছরে
সমপরিমাণ সময় ব্যয় করেছিলেন।
প্রত্যেক নবী-রাসূলের জীবনেই
কিছু না কিছু মুজিজা বা
অলৌকিক ঘটনা থাকে। মহানবী
সা:-এর মুজিজাসমূহের মধ্যে
মেরাজ অন্যতম। এটি এমনই একটি
ঘটনা, যার সাথে রয়েছে
ঈমানের গভীরতম সম্পর্ক। কাজেই
মেরাজের বৈজ্ঞানিক যুক্তি
খুঁজতে যাওয়া একটি অবান্তর
চিন্তা। বলা বাহুল্য, যুক্তি
কোনো দিনই ঈমানের ভিত্তি
নয়, ঈমানই হচ্ছে যুক্তির ভিত্তি।
বরং যুক্তির মতা যেখানে শেষ
ঈমানের যাত্রা সেখান থেকেই
শুরু। তার পরও কোনো কোনো মহৎ
ব্যক্তির এ ব্যাপারে যুক্তির
অবতারণা সেটা শুধু ঈমানের
স্বাদ অনুভব করার জন্যই।
বিজ্ঞানের এ চরম উৎকর্ষের যুগে
আমরাও তাই মেরাজকে
বিজ্ঞানের আলোকে বিশ্লেষণ
করে দেখতে চাই।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সশরীরে
মেরাজের সত্যতা যাচাই করতে
গিয়ে আমরা নিম্নোক্ত
প্রশ্নগুলোর সমাধান দেয়ার
চেষ্টা করব।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির
বেড়াজাল কিভাবে ছিন্ন করা
সম্ভব?
সময়সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যের
ব্যাখ্যা কী?
পূর্ববর্তী নবীগণের সাথে সাাৎ
কী করে হলো?
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি :
মহানবী সা:-এর সশরীরে
মেরাজের বিরুদ্ধে
বিরুদ্ধবাদীদের প্রধান যুক্তি
হলো জড় জগতের নিগড়ে আবদ্ধ
স্থূলদেহী মানুষ কিভাবে
মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ভেদ করে
আকাশলোকে বিচরণ করে? তা
ছাড়া পৃথিবীর আকর্ষণ শক্তি
যেখানে শূন্যে অবস্থিত স্থূল
বস্তুকে মাটির দিকে টেনে
নামায়, সেখানে কী করে
মহানবী সা: সশরীরে মেরাজে
গমন করেন?
গতিবিজ্ঞান (Dynamics),
মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব (Law of Gravity)
এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের (Law of
Relativity) সর্বশেষ বিশ্লেষণ ও
পর্যালোচনার আলোকে
মেরাজের ঘটনাকে বিচার
করলে এর সম্ভাব্যতা সহজেই
আমাদের কাছে বোধগম্য হয়ে
ওঠে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ
পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস
করতে পারেননি যে, মাধ্যাকর্ষণ
শক্তিকে ভেদ করা সম্ভব। যেমন
স্যার আইজাক নিউটনের সূত্র
অনুসারে, ‘law of motion and the idea of
universal gravitation বা মাধ্যাকর্ষণ
নীতি যা ডিঙানো অসম্ভব।
কিন্তু সত্তরের দশকের
বিজ্ঞানীরা চাঁদে পৌঁছার
মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে,
মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ডিঙানো
সম্ভব। এ সম্পর্কে আধুনিক
বৈজ্ঞানিক Arther G Clark তাঁর
‘The exploration of space’ গ্রন্থে
বলেছেন, 'As the distance from the
earth lengthens in to the thousand of miles
the reduction (of Gravity) becomes
substantial twelve thousand miles up, an
one-pound weight would weight only an
one ounce. It follows, therefore, that further
away one goes from the Earth. The easier
it is to go onwards'.
তিনি অন্যত্র বলেছেন, 'Gravity y
steadily weakens as we go up words away
from Earth, until at very great distances it
becomes completely negligible'.
এভাবে আকর্ষণ ক্ষমতা যখন
মোটেই বোঝা যায় না, সে
অবস্থাকে Zero Gravity বলা হয়।
গতিবিজ্ঞানীরা আরো
জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ২৫ হাজার
মাইল বেগে ঊর্ধ্বালোকে ছুটতে
পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে
মুক্তি লাভ সম্ভব। এ
গতিমাত্রাকে তারা মুক্তিগতি
(Escape velocity) নামে আখ্যায়িত
করেন।
আমরা জানি, মহানবী সা:
‘বুরাক’ নামক এক অলৌকিক
বাহনের ওপর বসে ঊর্ধ্বালোকে
গমন করেছিলেন। আরবি শব্দ
‘বারকুন’ অর্থ বিদ্যুৎ। বুরাক বলতে
মূলত বিদ্যুৎ থেকে অধিক
গতিসম্পন্ন বাহনকে বোঝায়।
অতএব দেখা যাচ্ছে, মাধ্যাকর্ষণ
যুক্তি দ্বারা মেরাজের
সম্ভাবনাকে নিবারিত করা
যাচ্ছে না।
সময়সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যের
ব্যাখ্যা : আপেক্ষিক তত্ত্বের
প্রবক্তারা বলছেন, সময়ের
স্থিরতা বলতে কিছুই নেই, ওটা
আমাদের মনের খেয়াল মাত্র।
বস্তুত সময় সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান
ও ধারণা আপেক্ষিক। সময়ের প্রভাব
সবার ওপর সমান নয় বলেই
আইনস্টাইন বলেছেন, 'There is no
standard time, all time is local'. দর্শকের
গতির তারতম্যে বস্তু বা ঘটনার
স্থান নির্ণয়ে তারতম্য ঘটে।
আবার একই সময়ে বিভিন্ন
স্থানে সঙ্ঘটিত দু’টি ঘটনা
দর্শকের গতির তারতম্যে বিভিন্ন
সময়ে সঙ্ঘটিত হচ্ছে বলে মনে হয়।
গতির মধ্যে সময়
অস্বাভাবিকভাবে খাটো হয়ে
যায়। সময় সম্বন্ধে আমাদের
ধারণার এই আপেক্ষিকতা গতি
সম্বন্ধীয় স্বতঃসিদ্ধের ওপর
আপতিত হলে যে ফলাফল দাঁড়ায়
তা হলো স্থান ও কাল সম্পর্কে
আমাদের উপলব্ধিটা একটা
গোলক ধাঁধার মধ্যে আপতিত বলে
মনে হতে পারে; কিন্তু প্রকৃত
অবস্থা তা নয়। আলোক
বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে
এটা আজ সবার জানা যে,
আলোকরশ্মি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০
মাইল অতিক্রম করে। আলোর গতিই
সর্বোচ্চ- এ ধারণাও ইদানীং
আবার ধ্রুব সত্য হিসেবে স্বীকৃত
নয়। Herold Leland Goodwin Zvi Space
Travel গ্রন্থে বলেছেন, ‘আলোর
গতি অপো মনের গতি ঢের
বেশি।’ যা হোক, আলোর গতির
সাথে কোনো বস্তুর গতির
সামঞ্জস্যের তারতম্যই (Degree of
Dispersion) সময়ের তারতম্য ঘটার
অন্যতম কারণ।
ওপরের বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলোর
আলোকে মেরাজের ঘটনা
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,
বোরাক আরোহী মহানবী সা:-এর
গতির মাত্রা এত বেশি ছিল যে,
সব ঘটনাই পৃথিবীর দর্শকের কাছে
কয়েক মুহূর্তের ঘটনা বলে মনে
হলেও কালের প্রবাহে তা ছিল
দীর্ঘ সময়।
পূর্ববর্তী নবীগণের সাথে
সাক্ষাৎ : মহান আল্লাহর সৃষ্টি এই
মহাবিশ্ব মূলত আলোর সমুদ্র ও
আলোর মেলা। গোটা সৃষ্টিলোক
আলো আর আলোতে তরঙ্গায়িত।
আলোর গতি ও প্রকৃতি হলো
বক্রাকার এবং থেকে থেকে
আসা। আর বৃত্তাকার বা থেমে
থেমে আসার কারণে এর মধ্যে
ধরা পড়ে সম্মুখের ঘটমান দৃশ্যপটের
চিত্র। এভাবে সৃষ্টির মাঝে
যাবতীয় ক্রিয়াকর্মের রেকর্ড
সচিত্র সংরক্ষিত হয়ে থাকে।
আলোর গতির সমপরিমাণ
গতিতেই মহাবিশ্বের অতীত
দিনের সব ঘটনা ও ক্রিয়াকাণ্ড
সংরক্ষিত হয়ে আছে। যদি কোনো
ব্যক্তি বা সত্তা আলোর গতির
চেয়ে দ্রুত গতিতে মহাবিশ্বের
প্রান্তরের দিকে ছুটে যায়
তাহলে সে ঘটনা প্রবাহের
বিভিন্ন স্তর অতিক্রমকালে
অতীতের সব ঘটনাই সে ঘটমান
অবস্থায় জীবন্ত দেখতে পাবে।
এভাবেই তিনি যখন আলোর
সর্বোচ্চ গতিতে চলতে ছিলেন,
তখন হজরত ঈসা, মুসা, ইব্রাহিম,
আদম আ: ও অন্যান্য অতীত ঘটনা
তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাই
নবী ও রাসূলদের সাথে বিশ্বনবী
সা:-এর সাক্ষাৎ মোটেই অবাস্তব ও
অবৈজ্ঞানিক নয়। মূলত তা ছিল
স্বাভাবিক ব্যাপার।
শেষ কথা : মেরাজের ঘটনাবলি
আমাদের চিন্তা ও কল্পনাকে
ঊর্ধ্বমুখী করে। বিজ্ঞানের
নভোচারিতায় অভূতপূর্ব সাফল্য
তার বাস্তব প্রমাণ। বস্তুত যেদিক
দিয়েই দেখি না কেন, মেরাজ
সত্যিই এক অপূর্ব ঘটনা। এ সম্বন্ধে
চিন্তা করলেও হৃদয় পবিত্র হয়,
মনের দিকচক্রবাল সম্প্রসারিত
হয়ে যায়। মূলত মেরাজ
মানবজাতির জন্য সামাজিক,
বৈজ্ঞানিক, আধ্যাত্মিক- এক
কথায় ইহলৌকিক ও পারলৌকিক
মঙ্গল সাধন করেছে।
সূত্র:দৈনিক নয়া দিগন্ত