ইসলামে দেনমোহরের গুরুত্বারোপ

মাওলানা তামীম রায়হান : মানুষ সামাজিক জীব। ঘর-সংসারে যে মায়া ও ভালোবাসার বন্ধনে আমাদের বসবাস তা পরম করুণাময়ের অসংখ্য নেয়ামতের অন্যতম একটি। সৃষ্টির সূচনা থেকে তিনি নারী ও পুরুষের মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছেন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী আবদ্ধ হয় বিবাহবন্ধনে এবং তৈরি হয় সুখময় সংসার, তারপর সন্তান-সন্ততি।
এভাবেই এগিয়ে চলেছে পৃথিবী। যে মহান দয়াময় অদৃশ্য থেকে এসব সৃষ্টি করে চলেছেন, তিনি আমাদের এ নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পবিত্র কুরআনে। আল্লাহ পাক বলেন, ”এই যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন- যাদের কাছে তোমরা প্রশান্তির আশ্রয় নাও। তিনিই তো তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা এবং মায়া গেঁথে দিয়েছেন, এটা তো তাঁরই নিদর্শন।” (সূরা রূম-২১) এ বৈবাহিক সম্পর্কের সূচনায় মহান আল্লাহ পাক নারীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে নারীর জন্য মোহরানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যা আদায় করা পুরুষের জন্য আবশ্যক। ইসলামের পরিভাষায় দেনমোহর বা মোহরানা একান্তই কনের অধিকার ও প্রাপ্য, যা আদায় করা বরের জন্য ফরজ। প্রতিটি বিবাহিত পুরুষের ওপর অবশ্য আদায়যোগ্য আমল। হোক তা নগদ কিংবা বাকি। আজ কিংবা কাল। মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে। এটা নারীর মূল্য নয় যে তা পরিশোধ করার পর মনে করতে হবে, এ নারী এখন স্বামীর কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। আবার তেমনিভাবে তা শুধু কথার কথাও নয়, যে শুধু মুখে মুখে নির্ধারণ করা হলো কিন্তু জীবনভর তা দেওয়ার কোনো তাগিদ থাকলো না। বরং স্ত্রীকে নিজের ঘরে আনার সময় উপহার হিসেবে তাকে এ মোহর দিতে হবে এবং সম্মান জানিয়ে তাকে নিজের ঘরে তুলতে হবে। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের বেশ কয়েক জায়গায় স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন, ”আর তোমরা নারীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও স্বেচ্ছায়, তবে তারা যদি তা থেকে কোনো অংশ মাফ করে দেয়, তখন তা তোমরা ভোগ করতে পার।” অন্যত্র তিনি বলেছেন, ”নারীদের তাদের পরিবারের অনুমতি নিয়েই তোমরা বিবাহ করো এবং তাদের অধিকারটুকু ভালোভাবে আদায় করে দাও।” (সূরা নিসা-২৫) একই প্রসঙ্গ আল্লাহ পাক উল্লেখ করেছেন সূরা মুমতাহিনার ১০ নং আয়াতে এবং আরও কয়েক জায়গায়। বারবার তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নারীর অধিকার ও সম্মান যেন আদায় করা হয়। বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মোহর আদায় করা উচিত। তবে কারণবশত তখন অপারগ হলে কবে আদায় করবে- তা নির্ধারণ করতে হবে। রাসূল (সা.) এর যুগ এবং সাহাবিদের সময়েও কেউ নারীর মোহরানা বাকি রেখে বিয়ে করতেন না। রাসূল (সা.) নিজ হাতে যেসব বিয়ে দিয়েছেন, হাদীসের কিতাবসমূহে সেসবের বিবরণে দেখা যায়, তিনি নগদ মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে করিয়েছেন- হোক তা লোহার আংটি কিংবা যুদ্ধে ব্যবহৃত বর্ম। বাকিতে মোহরানা দেওয়ার প্রচলত তখন ছিলনা। অপ্রিয় হলেও সত্য, এ মোহরানা আদায়ের বেলায় আমাদের সমাজের পুরুষ মহোদয়গণ নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়ে থাকেন। বিয়ের মজলিসে হয়তো সবাইকে শোনানোর জন্য মোহরানা ধরা হয় লাখ টাকা- অথচ সারাজীবন স্ত্রীর হাতে এর অর্ধেকও তুলে দেওয়ার সৎসাহসটুকু তারা দেখাতে পারেন না। অনেকে আবার কৌশলে মাফ চেয়ে নেন। এর সঙ্গে উল্টো যোগ হয়েছে লোভ লালসায় ঘেরা আজকের এ সভ্যতার নতুন অভিশাপ ‘যৌতুক’। মেয়ের বাবার কাছে ‘জামাই’কে খুশি করার জন্য উপঢৌকনের নামে ‘যৌতুক’ দাবি করে বরপ। আর এ অভিশাপে বিষাক্ত হচ্ছে কতো সুখের সংসার। আমাদের নীচু মানসিকতার এ বহিঃপ্রকাশ শুধু দুঃখজনক নয়, চরম অপরাধও। যেসব বিবাহিত পুরুষ আজও নিজেদের জীবনসঙ্গিনীর দেনমোহর আদায় করতে পারেননি কিংবা আদৌ তা পরিশোধের ইচ্ছা নেই, তাদের ব্যাপারে বায়হাকী শরীফের বর্ণনায় রাসূল (সা.) বলেছেন, যে পুরুষ বিয়ে করলো এবং মৃত্যু পর্যন্ত সে স্ত্রীর মোহরানা আদায়ের ইচ্ছাও করেনি, তবে সে অবৈধ ব্যভিচারকারী (ধর্ষণকারী) হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম আহমদের বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, মোহর আদায় করার নিয়ত ছাড়া যে ব্যক্তি কোনো নারীকে বিয়ে করে আর আল্লাহ পাক তো ভালো করেই জানেন যে তার মনে মোহরের নিয়ত নেই, তবে এই লোক যেন আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখালো এবং অন্যায়ভাবে তার স্ত্রীকে ভোগ করলো। কিয়ামতের দিন সে ব্যভিচারকারী পুরুষ হিসেবে উপস্থিত হবে। ফকিহ উলামায়ে কেরামের সর্বসম্মত মত হলো, যে পুরুষ তার জীবদ্দশায় এ মোহরানা আদায় করেনি, মৃত্যুর পরও তা অন্যান্য ঋণের মতো তার কাঁধে রয়ে যাবে। ইমাম আবু হানিফা এবং অন্যান্য ফকিহরা এমনও রায় দিয়েছেন, মোহরানা না পাওয়ার কারণে স্বামীর কাছে যেতে অস্বীকার করা কিংবা তাকে স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অথবা তার সঙ্গে কোথাও যেতে না চাওয়ার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে। এমন অবস্থায়ও তার খরচাদি স্বামীর ওপরই বর্তাবে। কারণ মোহরানা এবং নিজের ভরণপোষণ দাবি করা স্ত্রীর অধিকার। যে কোনোভাবেই স্ত্রী তা চাইতে পারে। (দুররে মুখতার) এেেত্র আরেকটি বিষয় লণীয়, পাত্রীদের প থেকে যদি পাত্রের সাধ্য অনুযায়ী মোহরানা ধরা হয়, তবে তা সবচেয়ে উত্তম। একথাও সত্য যে, মোহরানার ব্যাপারে ইসলাম সর্বনিম্ন কিংবা সর্বোচ্চ অংক বেঁধে দেয়নি। বরং তা সমাজ এবং সাধ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রাসূল (সা.) এও বলেছেন, সাধারণ আয়োজনের বিয়েই সর্বোত্তম বরকতময়। তার মানে এই নয় যে এতো সামান্য পরিমাণ মোহর ধরা হলো, যা স্ত্রীর সম্মান উপযোগী নয় কিংবা এতো চড়াও নয় যা স্বামীর সাধ্যের বাইরে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে, দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে দশ দিরহাম বা ৩০ গ্রাম রূপার সমমূল্য। রাসূল (সা.) নিজের মেয়ে এবং স্ত্রীদের বেলায়ও যে মোহরানা ধরেছিলেন তার পরিমাণ পাঁচশ’ দিরহাম বা ১৩১ তোলা ৩ মাশা রূপার সমমূল্য। (ইবনে মাজাহ-১৫৩২) এবং রাসূল (সা.) নিজের স্ত্রীদের বেলায়ও এ পরিমাণ মোহরানা আদায় করেছেন। তবে উম্মে হাবিবা (রা.) এর বেলায় এর পরিমাণ ছিল চার হাজার দিরহাম। (আরও বিস্তারিত জানতে মুসলিম শরীফ-১৪২৬, আবু দাউদ-২১০৫, নাসায়ী-৬/১১৬-১১১৯) মনে রাখা প্রয়োজন, ‘মোহরে ফাতেমি’ ধরতেই হবে, এমন কোনো নিয়ম ইসলামী শরিয়তে নেই। তবে কেউ যদি রাসূলের (সা.) এ পরিমাণকে বরকতময় মনে করে তা হিসাব করেন, তাতেও অসুবিধা নেই। আরেকটি বিষয় সবার জানা থাকা প্রয়োজন, বিয়ের সময় নববধূকে যেসব গহনা দেওয়া হয় তা যদি তাকে সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে যেন স্ত্রী চাইলে তা বিক্রি কিংবা কাউকে উপহার অথবা যা খুশি করতে পারেন এবং স্বামী তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, আমি তোমাকে এগুলো মোহর হিসেবে দিচ্ছি- তবে তা মোহরানা হিসেবে ধরা যাবে এবং কখনোই তা স্ত্রীর কাছে ফেরত চাওয়া যাবে না, এমনকি বিবাহ বিচ্ছেদের পরও নয়। নতুবা যদি তা তাকে শুধু ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়, তবে তা মোহরানা হিসেবে আদায় ধরা হবে না। মোহরানা নারীর একচ্ছত্র অধিকার, তিনি এ দিয়ে যা খুশি তা করতে পারেন। স্বামী, বাবা কিংবা অন্য কারোর এ থেকে কিছু নেওয়ার অধিকার নেই। সমাজে প্রচলিত যেসব রীতিনীতি রয়েছে, সেসবের ফাঁক ফোকরে যেন মোহরের অধিকার থেকে স্ত্রী বঞ্চিত না হন, তা খেয়াল করা সব সচেতন মুমিন পুরুষের অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। জীবনভর যে নারীর ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে সুখী ও নিশ্চিন্ত জীবন পার করে দিচ্ছেন স্বামীরা, এমন ভালোবাসার মানুষটিকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে কিয়ামতের মাঠে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে ‘ব্যভিচারকারীদের’ সঙ্গে উপস্থিত হওয়া নিশ্চয়ই কারো কাম্য নয়।
শুধু যুবকদের জন্য : যৌবনকাল জীবন সাজিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর সময়। মানুষ ছোটবেলায় যেমন অসহায় থাকে তেমনি বুড়ো বয়সেও সে দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এ দুই দুর্বলকালের মাঝে যৌবনের অবস্থান। সেজন্যই আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি বিষয়কে অন্য পাঁচটির আগে মূল্যবান ভেবে কাজ সেরে নাও। বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকালকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতার সময়কে, দারিদ্যে পড়ার আগে প্রাচুর্যকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে আর মৃত্যু আসার আগে তোমার জীবনকে। (হাকেম) ইমাম আহমদ (রহ.) বলতেন, ‘যৌবনকাল হলো এমন এক বস্তু যা হাতের তালুতে রাখা ছিল কিন্তু পড়ে গেল। ইবাদতে সময় দেওয়ার উপযুক্ত কাল হচ্ছে তোমার যুবককালের দিনগুলো। তুমি কি জানো, যৌবনের দিনগুলো তোমার কাছে আগত মেহমানের মতো, খুব দ্রুত তা তোমার কাছ থেকে বিদায় নিবে। আর তাই যা করার তা যদি এখনি না করো, তবে অনুশোচনা তোমাকে দীর্ঘদিন দগ্ধ করবে।’ সাধে কি আর আল্লাহ কিয়ামতের মাঠে ঠায় দাঁড় করিয়ে এই নেয়ামতের কথা মনে করিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, তোমার যৌবনে তুমি কী করেছো? কোথায় কোন কাজে তা ব্যয় করেছো? (তিরমিযী) আল্লাহর রাসুল (সা.) যে হাদীসে কিয়ামতের কঠিন মাঠে আরশের ছায়ায় অবস্থানকারীদের শ্রেণীবিভাগ করেছেন, তাতে তিনি ওই যুবকের কথাও এনেছেন যে তার যৌবনে আল্লাহর ইবাদত করতো। ইবনে আব্বাস রাযি. বলেছেন, মহান আল্লাহ যা কিছু ইলম ও ভালো দান করেন তা যৌবনকালেই করেন। হাফসা বিনতে সীরীন বলেছেন, হে যুবা সমপ্রদায়! আমল যা করার তা তোমাদের এই যৌবনেই করে নাও। আহনাফ বিন ক্বায়েস বলে গেছেন, যৌবনে যে নেতা হতে পারলো না, সে বার্ধক্যেও কিছু করতে পারে না। ইতিহাসের পাতা সা,ি রাসুল (সা.) এর অধিকাংশ সাহাবা যারা তাঁকে সর্বময় সাহায্য করেছিলেন এবং আপদে বিপদে বমের্র মতো তাঁকে আগলে রেখে পাশে ছিলেন, তাদের সবাই ছিলেন যার যার যৌবনের শীর্ষচূড়ায়। ওই যে দেখো, উসামাহ বিন যায়েদকে আল্লাহর নবী কাফেলার আমীর বানিয়ে পাঠাচ্ছেন অথচ তার বয়স মাত্র আঠার বছর। আবার ওদিকে উততাব বিন উসায়েদকে আল্লাহর নবী (সা.) হুনাইন যাওয়ার আগে মক্কায় দায়িত্বশীল বানিয়ে রেখে যাচ্ছেন যখন তার বয়স বিশের কিছু বেশি। শুধু কি তাই? দ্বীনের জন্য নানা যন্ত্রণা সহ্য করে যারা এ মশাল জ্বালিয়ে গেছেন আমাদের জন্য তাদের সবাই ছিলেন প্রায় তরুণ। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলকে ইমাম শাফেয়ীর গাধার পেছন পেছন হাঁটতে দেখে ইয়াহইয়া বিন মুয়ীন বললেন, কি ব্যাপার! আপনি শায়খ সুফিয়ানের হাদীস ও সনদ ছেড়ে এই যুবকের গাধার পেছনে ছুটছেন? ইমাম আহমদ বললেন, শায়খ সুফিয়ানের হাদীস যদি উঁচু সনদ থেকে ছুটে যায়, তবে নীচের সনদ দিয়ে তা আমি পেতে পারি। কিন্তু এ যুবক চলে গেলে তা কোনো পর্যায়ের সনদে আমি পাব না। একবার খলীফা উমর বিন আব্দুল আযীযের কাছে এক প্রতিনিধিদল এলো ইরাক থেকে। ওই দলের একজন যুবককে কথা বলতে উৎসাহী দেখে উমর বিন আব্দুল আযীয বললেন, এই যে শোনো, বড়কে কথা বলতে দাও, বড়জনকে সুযোগ দাও। যুবক এ কথা শুনে আরয করলো, হে খলীফাতুল মুসলিমীন, ব্যাপার তো বয়সের নয়, যদি ইসলামে বয়সের কারণে সব জায়গায় অগ্রগণ্য হওয়ার বিধান থাকতো তবে মুসলমানদের মধ্যে অনেক লোক আপনার চেয়ে বয়সে প্রবীণ থাকা সত্ত্বেও আপনি তাদের খলীফা হতেন না। এমন জবাব শুনে খলীফা বললেন, হ্যা, ঠিক বলেছো। বলো, তুমি বলো। শরহে মাক্বামাত কিতাবে মাসউদী বর্ণনা করেন, খলীফা মাহদী যখন বসরায় প্রবেশ করছিলেন তখন তিনি দেখলেন ইয়াস বিন মুআবিয়ার পেছনে প্রায় চারশ’ উলামায়ে কেরাম এবং বসরার নেতৃবৃন্দ হাঁটছেন অথচ ইয়াস তখনো তরুণ। এ দেখে মাহদী বলে উঠলেন, কি ব্যাপার, এই কাফেলায় কি আর কোনো প্রবীণ নেই যে তাদের আগে হেঁটে নেতৃত্ব দিতে পারে? তিনি ইয়াসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই ছেলে, তোমার বয়স কত? ইয়াস বলতে লাগলেন, আল্লাহ আপনার হায়াত দরাজ করুন, আমার এখন ওই বয়স চলছে যে বয়সে আল্লাহর নবী (সা.) উসামা বিন যায়েদকে কাফেলার আমীর বানিয়েছিলেন আর ঐ কাফেলায় হযরত আবু বকর ও উমর (রা.) এর মতো প্রবীন সাহাবারা শরীক ছিলেন। মাহদী বললেন, শাবাশ বেটা, যাও, এগিয়ে যাও। তারিখে বাগদাদ নামীয় ইতিহাসের প্রশিদ্ধ গ্রন্থে রয়েছে, ইয়াহইয়া বিন আকসামকে বিশ বছর বয়সে যখন বসরা শহরের বিচারপতি হিসেবে সেখানে পাঠানো হল তখন স্থানীয়রা তাকে ছোট মনে করল এবং জিজ্ঞেস করে বসলো, আমাদের এই মহামান্য কাজীর বয়স কত হে!? তিনি তাদের বললেন, শুনুন, আমি উততাব বিন উসায়েদের চেয়ে বয়সে বড় আর আল্লাহর নবী (সা.) আমার চেয়ে কম বয়সী থাকাকালে তাকে মক্কা বিজয়ের পর মক্কার বিচারপতি করেছিলেন, আমার চেয়ে কম বয়সেই মুআয বিন জাবালকে আল্লাহর নবী (সা.) ইয়েমেনে বিচারকাজে পাঠিয়েছিলেন, আমার বয়স তো কা’ব বিন সুআইদ এর চেয়ে বেশি, তিনি আমার চেয়েও কম বয়সে এই বসরায় এসেছিলেন খলীফা উমরের বিচারপতি হিসেবে। বসরাবসী সবাই তার এ উত্তরে চমকিত হলো এবং তাকে মেনে নিলো। আব্দুল্লাহ বিন যিয়াদকে খুরাসানে গভণর্র হিসেব যখন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছিল তখন তার বয়স মাত্র তেইশ বছর।
আবু মুসলিম রাষ্ট্র এবং দাওয়াতের কাজ নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন যখন তার বয়স মাত্র একুশ। শায়খ ইবরাহীম নখয়ীর কাছে মানুষ ইলম শিখতে আসতো যখন তার বয়স মাত্র আঠার বছর। আর ইলমে নাহুর জন্য বিস্ময়কর কর্ম সাধন করে ইমাম সীবওয়াইহ এর ইন্তেকাল হলো মাত্র বত্রিশ বছর বয়সে, অথচ এ সময়ে তিনি কতো কাজ করে গেলেন। (উলুওউল হিম্মাহ: শায়খ মুহাম্মদ ইসমাঈল মুকাদ্দিম) যুবকরা জাতির মেরুদন্ড। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম সম্মানের প্রাণশক্তি। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও কোনো আন্দোলন সফল হতে পারেনি যেখানে যুবক তরুণরা যায়নি। হালআমলে তাকিয়ে দেখি, বিশ্বের নানা সব বিস্ময়কর কর্মযজ্ঞ কি তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে একের পর এক জয় করে চলেছে তরুণরা। আমাদের জাতীয় কবির তারুণ্যের দিনগুলো পড়ে দেখি, যা কিছু লেখা ও গাওয়া, সবই তো ওই বয়সে তিনি করেছেন। যৌবনের গান শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন তার হৃদয়ের সবটুকু মমতা ও প্রাণময়তা উজাড় করে। আমরাও এ সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হই, তাতেই আমাদের জীবনে সফলতার দেখা মিলবে।

Comments