তরুণ প্রজন্ম হস্তমৈথুন করবে এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে এখন যেভাবে প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে, তাতে করে মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি সব ঘরে ঘরে। নীল ছবির হাতছানিতে খুব সহজেই সাড়া দিয়ে ফেলে এই তারুন্য। বিয়ের পর হস্তমৈথুন শিথিল হয়ে গেলেও বিয়ের পূর্বে এর বিরাম খুব একটা হয় না।
চিকিৎসাশাস্ত্র মতে, হস্তমৈথুন শরীরের জন্য খারাপ কিছু নয়। এটি একটি জৈবিক ব্যাপার, আপনি যদি এটি নাও করেন তাহলেও আপনার স্বপ্নদোষ হবে… যাইহোক, মনে রাখতে হবে সবকিছুরই অতিরিক্ত খারাপ।
অধিক হস্তমৈথুনের বেশ অনেকগুলো খারাপ দিক আছে। তার মাঝে প্রধান একটি হল, আপনার লিঙ্গের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, হস্তমৈথুনের প্রক্রিয়াও একটি বিশেষ দিক। অনেকেই নানারকম পদ্ধতি অবলম্বন করে… মনে রাখা উচিৎ, শারীরিক মিলনের সময়ে পুরুষের লিঙ্গে যে পরিবেশ লাভ করে সেই একই পরিবেশ আপনি হস্তমৈথুনের সময় তৈরী করতে পারছেন না… তাই জোর প্রয়োগে টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই হস্তমৈথুনের পদ্ধতি যথেষ্ট মোলায়েম হওয়া ভাল, নইলে ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া শারীরিকভাবে অন্য কোন ধরনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই, অনেকে বলে এতে করে স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়, এধরনের কিছু হওয়ার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হস্তমৈথুনের শারীরিক প্রভাব থেকে মানসিক প্রভাবই বেশি ভয়ংকর হতে পারে… এটি এখন অনেকভাবেই প্রমাণিত যে যারা নিয়মিত পর্ণ দেখেন কিংবা কল্পনা করে হস্তমৈথুন করেন তারা বাস্তবে নারীদেহের সংস্পর্শে ততটা উত্তেজিত হতে পারেন না। তাঁরা যৌনক্রিয়ায় আনন্দ পাওয়া এবং দেয়ার ব্যাপারে পারদর্শী হন না। এছাড়া হস্তমৈথুন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে, আপনি সময়মত এটি না করলে নানাধরনের অস্বস্তিতে পড়বেন। মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন করলে এক সময় সেক্সের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।
এটা বিবাহিত জীবনে সমস্যা হতে পারে।তাই, আপনি একা একা থাকবেন না। বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের লোকজনদের সাথে বেশি সময় দেবেন। এরপর, আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে মনের উপর কন্ট্রোলও বাড়বে। তখন নিজেকে ঠিক রাখার মানসিক শক্তি পাবেন। আপাতত অযথা সেক্স নিয়ে বেশি চিন্তা করবেন না। ব্যায়াম করুন। শরীরের যত্ন নিন। রাত জাগবেন না। নেশা করবেন না।
ইসলামিক দৃষ্টি কোন:
আল্লাহ তা’আলার দেয়া এ সুন্দর যৌবনকালটাকে ক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি তার স্বীয় লিঙ্গের পিছনে লেগে যায় এবং নিজ হাত দিয়ে এটা চর্চা করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার এ হাত পরকালে সাক্ষী দেবে যে, সে এ পাপ কোথায় কতবার করেছে- যা পবিত্র কালামে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ [٣٦:٦٥]
“সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে। ” -(আল- কুরআন, ৩৬:৬৫)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
“ যে ব্যক্তি স্বীয় জিহ্বা এবং লজ্জাস্থান জামিন হবে আমি তার জাহান্নামের জন্যে জামিন হবো।” -(বুখারি, মিশকাত)
উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে, মানব দেহের এ দু’টো অঙ্গ অত্যন্ত দুর্বল ও বিপদজনক। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বিশেষ করে লজ্জাস্থানের মাধ্যমে পাপ করাতে শয়তানের জন্য খুব সুবিধা। এ দু’টো অঙ্গের মাধ্যমে বেশীরভাগ পাপ হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যক্তি এ দু’টো অঙ্গের হেফাজত করে, বিশেষ করে যুবক অবস্থায় লিঙ্গের হেফাজত করে অবয়িদ কোন প্রকারেই বীর্যপাত ঘটাতে চেষ্টা না করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে।
অন্যত্র সহীহ হাদীস থেকে আরও প্রমানিত হয়ঃ
“(একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যুবকদের লক্ষ্য করে বলেন) হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে, তাদের বিবাহ করা উচিত। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। আর যে বিবাহের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে না, তার উচিত (কামভাব দমনের জন্য) রোযা রাখা।” -(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ
“তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ তা’আলা নিজের দায়িত্ব মনে করেন। (১) ঐ খতদাতা ব্যক্তি, যে তার খতের মূল্য পরিশোধের চেষ্টা করে। (২) সে বিবাহিত যুবক, যে চরিত্রের হিফাজতের উদ্দেশে বিবাহ করে। (৩) সে মুজাহিদ, যে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” -(হাসানঃ আত-তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)
হস্তমৈথুন এমনই একটি কাজ যার অর্থ নিজেকে কলুষিত করা। এটা একটা জঘন্য কলুষ বা পাপ বোধযুক্ত কাজ। হস্তমৈথুন এমনই গোপনীইয় পাপ যা মানুষ চোরের মত চুপিসারে করে এবং প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেনঃ
“উত্তম চরিত্র হল পু্ন্য। আর যে কাজ তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং লোকের কাছে প্রকাশ হওয়াকে তুমি পছন্দ কর না, তা হল পাপ।” -(মুসলিম, মিশকাত)
অশালীন, অশোভনীয় ও অন্যায় কাজে মনে সঙ্কোচবোধ করার নাম হলো লজ্জা বা হায়া। যার লজ্জা নেই সে পারে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হতে।
লজ্জা বা হায়া সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ
“লজ্জাশীলতা কল্যাণই বয়ে আনে।” -[বুখারী ও মুসলিম]
মুসলিমের এক বর্ণনায় এরূপ রয়েছেঃ “লজ্জাশীলতার পুরোটাই কল্যাণময়।”