২২৭) তারা ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরন করে তারা তাদের প্রতি জুলুম করা হলে শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়৷ আর জুলুমকারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের পরিণাম কি!
১৪৫. উপরে সাধারণভাবে কবিদের প্রতি যে নিন্দাবাদ উচ্চারিত হয়েছে তা থেকে এমন সব কবিদেরকে এখানে আলাদা করা হয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে চারটি বৈশিষ্ট্য৷
একঃ যারা মু'মিন অর্থাৎ আল্লাহ , তাঁর রসূল ও তাঁর কিতাবগুলো যারা মানেন এবং আখেরাত বিশ্বাস করেন৷
দুইঃ নিজেদের কর্মজীবনে যারা সৎ , যারা ফাসেক , দুষ্কৃতিকারী ও বদকার নন৷ নৈতিকতার বাঁধন মুক্ত হয়ে যারা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় না দেন৷
তিনঃ আল্লাহকে যারা বেশী বেশী করে স্মরণ করেন নিজেদের সাধারণ অবস্থায় , সাধারণ সময়ে এবং নিজেদের রচনায়ও৷ তাদের ব্যক্তি জীবনে আল্লাহভীতি ও আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে কিন্তু তাদের কবিতা পাপ-পংকিলতা , লালসা , কামনা রসে পরিপূর্ণ , এমন যেন না হয়৷ আবার এমনও যেন না হয় , কবিতায় বড়ই প্রজ্ঞা ও গভীর তত্ত্বকথা আওড়ানো হচ্ছে কিন্তু ব্যক্তি জীবনে আল্লাহর স্মরণের কোন চিহ্ন নেই৷ আসলে এ দু'টি অবস্থা সমানভাবে নিন্দনীয় ৷ তিনিই একজন পছন্দনীয় কবি যার ব্যক্তিজীবন যেমন আল্লাহর স্মরণে পরিপূর্ণ তেমনি নিজের সমগ্র কাব্য প্রতিভাও এমন পথে উৎসর্গীকৃত যা আল্লাহ থেকে গাফিল লোকদের নয় বরং যারা আল্লাহকে জানে, আল্লাহকে ভালোবাসে ও আল্লাহর আনুগত্য করে তাদের পথ৷
চতুর্থ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে এমন সব ব্যতিক্রমধর্মী কবিদের যারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে কারোর নিন্দা করে না এবং ব্যক্তিগত, বংশীয় বা গোত্রীয় বিদ্বেষে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বালায় না৷ কিন্তু যখন জালেমের মোকাবিলায় সত্যের প্রতি সমর্থন দানের প্রয়োজন দেখা দেয় তখন তার কণ্ঠকে সেই একই কাজে ব্যবহার করে যে কাজে একজন মুজাহিদ তার তীর ও তরবারিকে ব্যবহার করে৷ সবসময় আবেদন নিবেদন করতেই থাকা এবং বিনীতভাবে আর্জি পেশ করেই যাওয়া মু'মিনের রীতি নয়৷এ সম্পর্কেই হাদীসে বলা হয়েছে , কাফের ও মুশরিক কবিরা ইসলাম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ,দোষারোপ , অপবাদের যে তাণ্ডব সৃষ্টি করতো এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষের যে বিষ ছড়াতো তার জবাব দেবার জন্য নবী (সা) নিজে ইসলামী কবিদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন ও সাহস যোগাতেন ৷ তাই তিনি কা'ব ইবনে মালেককে (রা) বলেনঃ
-------------------------------------------
"ওদের নিন্দা করো , কারণ সেই আল্লাহর কসম , যার হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ আবদ্ধ, তোমার কবিতা ওদের জন্য তীরের চেয়েও বেশী তীক্ষ্ন ও ধারালো৷"
হাসসান ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেনঃ
---------------------------
"তাদের মিথ্যাচারের জবাব দাও এবং জিব্রীল তোমার সঙ্গে আছে৷" এবং "বলো এবং পবিত্র আত্মা তোমার সংগে আছে৷
তাঁর উক্তি ছিলঃ
---------------------------------
"মু'মিন তলোয়ার দিয়েও লড়াই করে এবং কণ্ঠ দিয়েও৷"
১৪৬. জুলুমকারী বলতে এখানে এমনসব লোকদের কথা বুঝানো হয়েছে যারা সত্যকে খাটো ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সম্পূর্ণ হঠকারীতার পথ অবলম্বন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর কবি, গণক ,যাদুকর ও পাগল হবার অপবাদ দিয়ে বেড়াতো ৷ এ ধরনের অপবাদ দেবার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল , যারা তাঁর সম্পর্কে জানে না তাঁর দাওয়াত সম্পর্কে তাদের মনে কু-ধারণা সৃষ্টি করা এবং তাঁর শিক্ষার প্রতি যাতে তারা আকৃষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা করা৷
Comments
Post a Comment